দেশে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। রাজধানী ঢাকার পর এবার জেলা শহরগুলোতেও উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। জনমনে আতঙ্কের মধ্যে ডেঙ্গুর কিছু প্রাকৃতিক সমাধানের কথা ছড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে একটি হলো-পেঁপে পাতার রস।
বলা হচ্ছে, পেঁপে পাতার রসের সাথে আরো কিছু উপাদান যোগ করে একটি নির্দিষ্ট সময় বিরতিতে পান করলে ডেঙ্গু থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। কিন্তু আসলেই পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গু প্রতিরোধে কতটা কার্যকর?
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলছেন, পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গু নিরসনে ভূমিকা রাখে, এই দাবির কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নিরসনে পেঁপে পাতার রসের ভূমিকার পরীক্ষা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে, কিন্তু পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি যে এটি ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কার্যকর।’
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পরীক্ষা হলেও বৈজ্ঞানিক নীতি অনুসরণ করে কোনো ধরণের ‘র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল’-এর মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়নি বলে জানান মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘কোন ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হলে র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল হতে হবে। এছাড়া নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে ঐ ওষুধটি কোনো একটি নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজের এ শিক্ষক বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে পেঁপে পাতার রসের কার্যকারিতার বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।
তবে পৃথিবীর কয়েকটি দেশে ডেঙ্গু রোগীকে পেঁপে পাতার রস খাওয়ানোর উপদেশ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
২০১৭ সালে ভারতে ৪০০ জন ডেঙ্গু রোগীর ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, পেঁপে পাতার রস খাওয়া রোগীদের রক্তকণিকার পরিমাণ অন্য রোগীদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি বেড়েছে এবং তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অপেক্ষাকৃত কম। খবরটি তখন ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’তে প্রকাশিত হয়। এছাড়া পেঁপে পাতার রস খাওয়ানো ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে রক্ত নেয়ার প্রয়োজনীয়তার হারও কম হিসেবে পরিলক্ষিত হয়।
ডেঙ্গুর তীব্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীদের নির্দিষ্ট পরিমাণে পেঁপে পাতার রস খাওয়ার উপদেশ দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ওয়েবসাইটে।
পেঁপে পাতার রস খাওয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধ গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমে আরেকটি বিষয় নিয়েও আলোচনা হচ্ছে – সেটি হলো নারিকেল তেল মাখালে মশায় কামড়ায় না।
কিন্তু নারিকেলে তেল মশা তাড়ায় বা এটি শরীরে মাখলে মশায় কামড়ায় না- এমন দাবির সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা আখতার।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘মশা যেহেতু চামড়া ভেদ করে রক্ত পান করে, তাই চামড়ার ওপর ঘন যেকোনো ধরণের তেলই মশাকে কিছুটা প্রতিহত করতে পারে বলে আমি মনে করি।’
তবে এক্ষেত্রে নারিকেল তেলের সাথে কীটনাশক জাতীয় কোনো দ্রব্য মিশিয়ে নিলে আরো বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ন্যাপথলিন বা কর্পূরের গুড়া বেশ ভাল কীটনাশক। নারিকেল তেলের সাথে কর্পূরের গুড়া মিশিয়ে নিলে মশা নিবারণে তা আরো বেশি কার্যকর হতে পারে।’
এছাড়া কড়া গন্ধ থাকায় নারিকেল তেলের বদলে সরিষার তেলও মশা দূরে থাকতে কার্যকর হতে পারে।
সুত্র ঃ সময় সংবাদ