প্রতিবছর বর্ষাকাল এলেই আমাদের দেশে শুরু হয়ে যায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আর এর জন্য দায়ী এডিস প্রজাতির বিভিন্ন প্রকারের মশা। যারা মূলত দিনের বেলায় কামড়ায়! শুধু কি আমাদের দেশে? বিশ্বের নানা দেশে চলছে ডেঙ্গুর মহামারী। গ্রীষ্মপ্রধান ও গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের কাছাকাছি দেশ যেমন বাংলাদেশ, ভারত ও ব্রাজিলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব খুব সাধারণ বিষয়।
এবার দেখা যাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডেঙ্গুর চিত্র:
ফিলিপাইন:
এ বছর ভয়াবহ আকারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হওয়ায় ফিলিপাইনে এ মাসে জাতীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে ডেঙ্গু এলার্ট। সাড়ে চারশোর বেশি মানুষ মারা যাওয়ার পর এই অ্যালার্ট ঘোষণা করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে সেখানে প্রায় এক লাখ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট করা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা শতকরা ৮৫ ভাগ বেশি।
হন্ডুরাস:
ভয়াবহ ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে নাজেহাল হন্ডুরাস। গেল ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ আকারে রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে মধ্য আমেরিকার দেশটিতে। সরকারি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
দেশটির ৩২টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ২৬টির নির্ধারিত বেডের চেয়ে অতিরিক্ত রোগীতে বোঝাই। চলতি বছর ২৮ হাজার লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়, যাদের অধিকাংশই শিশু। তাই জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে দেশটিতে। বাসাবাড়ি ও গণবসতিপূর্ণ এলাকায় এ রোগ সৃষ্টিকারি এডিস মশা নিধণ ও এ রোগ নির্মূলের নানা কর্মসূচি নেওয়া গ্রহণ করা হয়েছে।
সিংগাপুর:
বাংলাদেশের মতোই সিঙ্গাপুরেও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর। দেশটিতে এবছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত নয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। ২০ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজার ২০ জন।
সিঙ্গাপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় পরিবেশ সংস্থা (এনইএ) জানায়, এর আগে ২০১৬ সালে সিঙ্গাপুরে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ১২ জনের মৃত্যু হয়। আর চলতি বছরের শুরুতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পাঁচজন। এমন পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুরে যেসব পরিবার ডেঙ্গুর বংশবিস্তারের জন্য দায়ী প্রমাণিত হবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে কমপক্ষে ২০০ ডলার জরিমানা দিতে হবে। গেল বছর প্রায় ৪ হাজার ৭০০ পরিবার ডেঙ্গুর বংশবিস্তারে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় জরিমানা করেছিল সিঙ্গাপুর সরকার।
ডেঙ্গু রোধে কলকাতার সাফল্য
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কলকাতা কিন্তু দারুন সফল। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে শহরটির সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। আগে কলকাতার কর্পোরেশনগুলো বর্ষা শুরু হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ শুরু করত। কিন্তু ততদিনে মশা ছড়িয়ে পড়ত পুরো শহরে।
আর তাই বেশ কয়েক বছর ধরে তারা বছরজুড়েই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। আর তার সুফলও পাচ্ছে শহরের অধিবাসীরা। কোথাও পানি জমে না থাকে, শহরের প্রতিটা হাসপাতাল, নার্সিং হোম বা পরীক্ষাগারে রোগীদের কী কী রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে, কী ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে, তার হিসাব রাখা হয়। যাতে ডেঙ্গু রোগীর খোঁজ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া যায়।
সুত্র ঃ নাগরিক, জাদু মিডিয়া লিমিটেড