মশা নিধনের ব্যবস্থা নেই স্কুলগুলোতে



রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার নেয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্কুলগামী শিশুদের অভিভাবকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় শরীরের উন্মুক্ত অংশ ঢেকে কিংবা মশা প্রতিরোধী তেল মেখে সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন অনেকেই। আবার ক্লাসে মশার অত্যাচারে স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে অনেক শিশু। এক বা দুই সপ্তাহ পর পর সিটি করপোরেশন থেকে মশক নিধনের যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে সচেতন করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না তারা। তবে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অতি শিগগিরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
মশার কামড়ের ভয়ে বেশ কিছুদিন ধরে কলেজ ড্রেসের সঙ্গে লম্বা মোজা ও জামা পরে শরীর ঢেকে ক্লাসে যাচ্ছেন ব্রততী দেবনাথ। সেন্ট্রাল ওমেন্স কলেজের একাদশ শ্রেণির এই ছাত্রী যুক্তি দেখিয়ে বলেন, কখন, কোথায়, কীভাবে মশা কামড়াবে তা তো আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। সেজন্য নিজের নিরাপত্তা নিজেই নিতে হচ্ছে। অভিভাবকদের পরামর্শে একইভাবে স্কুলে যেতে হচ্ছে নারিন্দা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৃজনকেও। ভিকারুন্নিসা নূন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবকের অভিযোগ, ক্লাসে মশার অত্যাচারে তার মেয়েটি স্কুলে যেতে অনাগ্রহী হওয়ায় কর্তৃপক্ষ জানানোর পরও এ ব্যাপারে তারা কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।
ধানমন্ডির বয়েজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সামিনা ইয়াসমিন ভোরের কাগজকে বলেন, ১৫ দিন আগে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা বিদ্যালয়ের আশপাশে মশার ওষুধ ছিটিয়ে চলে গেছে। এরপর আর তারা আসেনি। তবে আমরা নিজেরা মিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখেছি। অ্যাসেম্বলিতে ছাত্রদের ডেঙ্গু রোগ বিষয়ে সচেতন করছি। সিটি করপোরেশনের ভ‚মিকা নিয়ে একই কথা বললেন আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের (মুগদা শাখা) অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের সচেতন করছি। তবে শিক্ষা বিভাগ থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাইনি।
রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। প্রতি মিনিটে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিনজন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে ব্যাপকহারে। ঢাকা মহানগরীর দুই হাজারের বেশি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ১৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থীও রয়েছে ঝুঁকিতে। নগরীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে মশার উর্বর প্রজননক্ষেত্র। তবে এসব নিয়ে শিক্ষা বিভাগের কোনো নির্দেশনা নেই।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এএফএম মনজুর কাদির ভোরের কাগজকে বলেন, মশা নিধনের কাজটি করে সিটি করপোরেশন। তবে আমরা প্রতিটি বিদ্যালয় পরিচ্ছন্ন রাখতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদেরর সচেতন করার কথা বলেছি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান ভোরের কাগজকে বলেন, মশা নিধনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। দরকার হলে মহাপরিচালক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

সুত্র ঃ ভোরের কাগজ

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *