এবার রেকর্ডসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল গুলোতে

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১০ হাজার ১৪৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল গত বছর। এক বছরে এত রোগী ভর্তির ইতিহাস এ দেশে নেই। এরই মধ্যে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাত গুণ বেশি। এ মাস শেষ হতে এখনো ৬ দিন বাকি। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ২৫৬ জন। রেকর্ডসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী নিয়ে ঢাকার হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে।

ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। সাধারণত এপ্রিল-জুন মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ঢাকার ১২টি সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল এবং ১৭টি বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য নিয়মিত সংকলন করে। সরকারের এই সংস্থা বলছে, গতকাল বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৩২২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। এর মধ্যে শুধু গতকাল ভর্তি হয়েছে ৫৪৭ জন, আগের দিন যা ছিল ৫৬০ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে ৮ জন মারা গেছে। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল চিকিৎসকদের সম্মেলন হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে। প্রায় এক হাজার চিকিৎসককে ডেঙ্গুর হালনাগাদ চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা হয়। একই সময়ে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘মশকনিধন ও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ’ উদ্বোধন করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এতে দুই মেয়র ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল ‘মশকনিধন ও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘ছেলেধরার’ মতোই গুজব। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে, তা কাল্পনিক। সাড়ে তিন লাখ আক্রান্তের তথ্য সম্পূর্ণভাবে কাল্পনিক ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য। তিনি বলেন, মশা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবিলা করবে।

একই অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মশার ওষুধ আমদানিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, তার সম্বন্ধে যেসব বক্তব্য এসেছে, তার জন্য ওষুধ পরীক্ষা করা হয়েছে। আমরা কার্যকরী ওষুধ ব্যবহার করছি বলে পরীক্ষার মধ্যে পাওয়া গেছে।’ তিনি বলেন, সব প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করছে, এ জন্য ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ২৫৬ জন
চলতি বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ৩৩ জনের মৃত্যু 
ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি 
এপ্রিল-জুন মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে 
সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু হবে আগে থেকেই জেনে আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রথম থেকে (মার্চ-এপ্রিল) আমাদের সিটি করপোরেশনগুলোকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্য কর্মসূচি নিয়েছি। ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের নিজ উদ্যোগে মশা নিধন করা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক ও সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা জনগণকে সচেতন হয়ে নিজ নিজ জায়গা এবং এর আশপাশের স্থান পরিষ্কার রাখার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, চিত্রনায়িকা মৌসুমী। পরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা তৈরিতে র‍্যালি বের হয়।

গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন আয়োজিত চিকিৎসকদের সম্মেলনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘যেভাবে রোহিঙ্গা পপুলেশন বাড়ে আমাদের দেশে এসে, সেভাবে মসকিউটো পপুলেশন বেড়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘মশা নিধন করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, আমাদের দায়িত্ব, ডাক্তারদের দায়িত্ব, নার্সদের দায়িত্ব, যারা অসুস্থ হবে তাদের সেবা দেওয়া। মশা মারার দায়িত্ব আমাদের না।’

ডেঙ্গু পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রতিদিন দুর্ঘটনায় ১৫ জন মারা যায়। প্রায় ১০ জন লোক রোজ সাপের কামড়ে মারা যায়। আর কয়েক মাসে মাত্র ৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। আমরা এসব খবর রাখি না।’

অবশ্য একই অনুষ্ঠানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, এ বছর ঢাকা মেডিকেলে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী যে আটজনের তথ্য উল্লেখ করেছেন, তাতে এই চারজন নেই বলে সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ডেঙ্গুর আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে চিকিৎসকদের অবহিত করার জন্য এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল।

সুত্র ঃ প্রথম আলো

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *