রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ধরন বদলানোয় এবার ডেঙ্গুতে নানা জটিলতা দেখা যাচ্ছে। ঝুঁকি থাকায় প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক রোগীকে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষাসহ নানা ধরনের পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ছে। শক সিনড্রোম হওয়ায় অনেক রোগীকে নিতে হচ্ছে আইসিইউতে। ফলে চিকিৎসার খরচ জোগাতে নাভিশ্বাস উঠছে।
কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে সুস্থ হতে ১০-২০ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। কখনো কখনো সময় আরও বেশি লাগছে। সুস্থ হতে দিন যত বেশি লাগছে খরচও তত বেশি হচ্ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ২০ দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন খোলা কাগজের সহ-সম্পাদক খায়রুল বাসার আশিক। ২০ দিনে তার চিকিৎসা খরচ হয়েছে ৬ লাখ টাকার বেশি।
এর মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়েছে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এছাড়া ওষুধ কেনা ছাড়াও আনুষঙ্গিক খরচ নিয়ে এই টাকা ব্যয় হয়েছে বলে আশিকের পরিবার জানিয়েছে। গত মাসে আশিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে ১৭ জুন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ৭ দিন হাসপাতালটির আইসিইউতে রাখা হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে একটি কেবিনের দৈনিক ভাড়া চার থেকে ১০ হাজার টাকা। রাজধানীর গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি কেবিনের দৈনিক ভাড়া ৮ হাজার টাকা কিংবা তার চেয়েও বেশি। শুধু ইবনে সিনা কিংবা গ্রীন লাইফ হাসপাতাল নয় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল, ল্যাবএইড, ইউনাইটেড, অ্যাপোলোসহ প্রায় প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা খরচ খুবই ব্যয়বহুল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে ১০ থেকে ১৫ দিন তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। এই সময় কেবিন ভাড়া ছাড়াও ডাক্তারের ফি ও ওষুধ কেনাসহ আনুষঙ্গিক আরও অনেক ব্যয় রয়েছে। এসব ব্যয় মেটাতে অভিভাবকদের নাভিশ্বাস ছুটছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বেসরকারি স্কয়ার হাসপাতালে ৩৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন, জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত এখানে ভর্তি হন ৩০৯ জন। ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৫ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬৬ জন, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৭ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬৬ জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলে ভর্তি হচ্ছেন ৪৯ জন। কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী রাজধানী বেসরকারি ৩৫টি হাসপাতালে ৬৬৮ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। রাজধানীতে বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে চার শতাধিক। এসব হাসপাতালে মোট কতজন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তার সঠিক তথ্য সরকারের কাছে নেই।
বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু সাধারণত ৫-৬ দিন থাকে এবং তারপর ভালো হয়ে যায়। কিন্তু অবহেলা করলে ঝুঁকিতে পড়তে হয় এবং তখন অনেক দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। জ্বর কমে গেলে অনেক রোগী মনে করেন রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু ডেঙ্গুর মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় আসলে এটাই।
এ সময়ই প্লাটিলেট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী সময়টাকে তাই বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’। এ সময় সচেতন থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অনেকেই এ সময়টাকে অবহেলা করার কারণে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন।
সুত্র ঃ খোলাকাগজ