সারা দেশে প্রতিদিনই ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাজধানীর কোনো কোনো পরিবারের সব সদস্যই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ইতিমধ্যে দেশের ডেঙ্গুর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে একে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
এমন পরিস্থিতে ডেঙ্গু দমনে পরিস্থিতি সামাল দিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিদেশ থেকে জিনোটাইপ মশার ডিম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে অধিদফতর।
এই ডিম থেকে জন্ম নেয়া জিনোটাইপ মশা এডিসের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করবে। এতে স্বাভাবিক কারণেই ডেঙ্গুর বিস্তার কমে আসবে।
ডেঙ্গুর এই অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিকে ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে সেটিকে পুরোপুরি মহামারি বলা না হলেও এর দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। অর্থাৎ যে কোনো সময় এর বিস্তার মহামারিতে রুপ নিতে পারে। এখনই জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। কারণ বছরের এই দুই মাস থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এতে অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছ, গত ২৩ দিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ হাজার ৬৩৭ জন। সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত মৃত্যু ঘটেছে ৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৪৭৩ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
সবমিলিয়ে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও এখনই এটাকে পুরোপুরি মহামারি বলতে নারাজ বিশেষজ্ঞসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্তিতি অবশ্যই আউটব্রেক (প্রাদুর্ভাব)।
তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরেকটু বেড়ে গেলেই সরকারিভাবেই ডেঙ্গুকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হতে পারে।
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মানুষকে বাঁচাতে ইতিমধ্যে চিকিৎসকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে পকেটবুক আকারে গাইডলাইন। যাতে তারা (চিকিৎসক) ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে পারেন।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫০ শতাংশ সাধারণ ও মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বর্তমানে প্রতি বছর মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গু জ্বরে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। প্রতি মিনিটেই বিশ্বের কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই শিশু। আক্রান্তদের মধ্যে বছরে ২২ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করে বলেন, ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় মহামারি হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
সুত্র ঃ যুগান্তর