কক্সবাজারের কুতুপালং ও বালুখালির রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত ছিল ২ হাজার ৩৪৬ জন এবং মারা গিয়েছিল ২৫ জন। কিন্তু এ হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গত ৩০ জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্দেহজনক ডিপথেরিয়া রোগী আছে ৮ হাজার ২৮২ জন। এর মধ্যে মারা যায় ৪৭ জন।
তবে ‘করনিব্যাক্টেরিয়াম ডিপথেরি’ নামক ব্যাকটেরিয়ায় ঘটিত সংক্রামক এ রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু এটি সংক্রামক ব্যাধি হওয়ায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের রক্ষা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ডিপথেরিয়া রোগটি দেশে নির্মুলের পথে। শিশুদের টিকা দেওয়ায় তা সহজে কাউকে আক্রান্ত করে না। কিন্তু প্রায় বিলুপ্ত ডিপথেরিয়া রোগ বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ রোগ দেখা যাচ্ছে। কারণ মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক টিকা থেকে বঞ্চিত। বর্তমানে তারা আমাদের দেশে অবস্থান করায় এ রোগ দেখা দিচ্ছে। তবে ডিপথেরিয়া রোগ বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় গত ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ক্যাম্প সমুহে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাউন্ডে এ পর্যন্ত ১১ লাখ ৩১ হাজার ১৩৯ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. এম এ মতিন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডিপথেরিয়া রোগী আছে। তবে তা আতঙ্ক হওয়ার মত সংখ্যা নয়। তাছাড়া এ রোগ বিস্তার রোধে আমরা টিকাদান কর্মসূচি পালন করে আসছি। আশা করছি, এ কর্মসূচির মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা যায়, ডিপথেরিয়া একটি মারাত্মক সংক্রমক রোগ। আক্রান্তের হাঁচি, কাশির মাধ্যমে খুব দ্রুত অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রচন্ড জ্বর, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট ডিপথেরিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। এ রোগের চিকিৎসায় প্রথমে অ্যান্টিটক্সিন ইনজেকশন দিয়ে ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে হয়। এছাড়া ইনফেকশন দূর করতে ইরাথ্রোমাইসিন ও পেনিসিলিনের মত এন্টিবায়োটিকও দেওয়া হয়। ডিপথেরিয়া ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় আক্রান্তদের অন্যদের থেকে আলাদা রাখা হয়। এ রোগের উপসর্গের মধ্যে আছে, গলা ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পাওয়া, টনসিলের মত কিছু দৃশ্যমান হওয়া, গলায় পর্দার মত কিছু অনুভব করা, হাঁফানি হাওয়া। ডিপথেরিয়ার লক্ষণগুলো দেখা যায় ইনফেকশন হওয়ার দুই থেকে সাত দিন পর। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার জ্বর থাকা, ক্লান্তি ও শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, গলা ব্যথা, গলার গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, ঢোক গিলতে সমস্যা ও ব্যথা লাগা এবং বেশি কাশি হওয়া।