ডায়াবেটিক রোগী সচেতন হলে চিকিৎসকের ওপর নির্ভরতা কমে

নিয়ন্ত্রণে রাখলে ডায়াবেটিস অভিশাপ নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য এবং বারডেম পেশেন্ট ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান।

তিনি বলেন, ডায়াবেটিস এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। এ থেকে রেহাই পেতে হলে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। খাবারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সকলকে নিয়মিত ব্লাড সুগার চেক করা হবে। ডায়াবেটিস এমন এক রোগ, স্বাস্থ্যশিক্ষাই যার প্রধান চিকিৎসা। যথাযথ স্বাস্থ্যশিক্ষা পেলে একজন ডায়াবেটিক রোগী চিকিৎসকের ওপর নির্ভর না হয়ে এ রোগ ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। মঙ্গলবার এশিয়াটিক সোসাইটি আয়োজিত ‘ডায়াবেটিস : কারণ নির্ণয় ও নিরাময়’ শীর্ষক একক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ।

৬০ বছরের ডায়াবেটিক রোগী বারডেম ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য মাহবুবুজ্জামান। নিজের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার নানা দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি গত ৬০ বছর ধরে ডায়াবেটিক রোগী। বর্তমানে বারডেম হাসপাতালে ছয় লাখের বেশি রোগী থাকলেও আমার রেফারেন্স নম্বর ১২৮৯। ডায়াবেটিস রোগের উপসর্গ হলো শরীরের ওজন বৃদ্ধি বা কমে যাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, দুর্বলতা, মাথা ব্যথা, চুলকানি ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো থাকলেই ডায়াবেটিস থাকবে তা নয়। তবে ডায়াবেটিস হলে এসব উপসর্গ লক্ষ্যণীয়। ডায়াবেটিস রোগটা এমন একটি রোগ, সে মাদুর বিছিয়ে রাখে এবং অন্য রোগকে আমন্ত্রণ জানায়। একবার মাদুরে বসাতে পারলে আর ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। বিশেষ করে চোখ, হার্ট ও কিডনিজনিত রোগ। ফোঁড়া হলে সহজে ভাল হতে চায় না। পায়ে গ্যাংরিন হলে পা কেটে ফেলতে হতে পারে। মাহবুবুজ্জামানা আরও বলেন, ডায়াবেটিস রোগের ভয়াবহতা খুবই মারাত্মক। একজনকে দেখলে মনে হয় না সে ডায়াবেটিস রোগী। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে পরীক্ষা করাতে গেলে ধরা পড়ে ডায়াবেটিস। অনেকে ডায়াবেটিস রোগটা গোপন করে। এক গোপন করাটা নিতান্তই বোকামি। এটা নোংরা বা ছোঁয়াচে রোগ না। তাই এটা গোপন করার প্রশ্নই ওঠে না।

তিনি বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে জীবন-যাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে ডায়াবেটিস মহামারী আকার ধারণ করছে। ডায়াবেটিস যে হারে বাড়ছে তাদে আমাদেরকে এখনই এ রোগ প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে তারা ডায়াবেটিসকে সুনিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মঠ জীবন নিশ্চিত করতে পারে। ঘন ঘন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে। এক পর্যায়ে পৌঁছলে অনেক জটিল রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস এমন এক রোগ, যা সুনিয়ন্ত্রণে না থাকলে রোগীল হৃদপি-, কিডনি ও চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীদের শতকরা ৫০ ভাগই জানেন না যে, তাদের ডায়াবেটিস আছে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *