পর্যটনের জন্য মালয়েশিয়া সুনাম অনেক আগে থেকেই রয়েছে। দেশটিতে বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই বেড়াতে যান। বেড়ানোর পাশাপাশি কেউ কেউ আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছেন। তাই মালয়েশিয়া সরকার এটাকে স্বাস্থ্য পর্যটন নাম দিয়েছে। আর এই স্বাস্থ্য পর্যটন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশটিতে। মালয়েশিয়ায় এখন দুই শতাধিক আধুনিক হাসপাতাল রয়েছে। বেসরকারী হাসপাতালগুলোয় সেবাগ্রহণকারীদের সর্বক্ষণিক সহযোগিতা দিতে বিশেষ সংস্থা মালয়েশিয়া হেলথ কেয়ার ট্যুরিজম কাউন্সিল (এমএইচটিসি) প্রস্তুত। এই সংস্থা এয়ারপোর্ট থেকে রোগীদের রিসিভ করে নিয়ে যাচ্ছে পছন্দের হাসপাতালে। রোগীদের কোন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না।
মালয়েশিয়ায় স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে এমএইচটিসি জানিয়েছে, গত ১০ বছর ধরে মালয়েশিয়া সরকার স্বাস্থ্য খাত উন্নয়নে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। সেখানকার চিকিৎসা এখন বিশ্বমানের। এখন বাংলাদেশ থেকে অনেকেই মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন চিকিৎসাসেবা নিতে। বেড়াতে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নেয়া বাংলাদেশীদের সংখ্যাও বাড়ছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিয়েছে দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে। এমএইচটিসির ব্যবস্থাপনায় মালয়েশিয়ার কিছু শীর্ষ হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সেখানে রোগীর ভিড় কম। সেই সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্ব অনেক বেশি। সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি হাসপাতালই বিশেষায়িত চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। কেপিজে হেলথ কেয়ার গ্রুপের ২৫টি হাসপাতাল আছে মালয়েশিয়াজুড়ে। কুয়ালালামপুরেই আছে সাতটি।?
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে একদল সংবাদ কর্মী ও ছয়জন ডাক্তারের প্রতিনিধি দলকে এমএইচটিসির আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে কুয়ালালামপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বিশ্বমানের ‘থমসন হসপিটাল’, ‘টিএমসি ফারটিলিটি এ্যান্ড ওমেন্স স্প্যাশালিস্ট সেন্টার’, ‘গ্লিনেগেলস হসপিটাল’, ‘সান ওয়ে মেডিক্যাল সেন্টার’, ‘কেপিজে আমপাং পুত্রেই ও কেপিজে দামানসারা’ বিশেষায়িত হাসপাতালের চিত্র ঘুরে দেখানো হয়েছে। হাসপাতালগুলো মূলত বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। আধুনিক ও উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হাসপাতালগুলোতে বেশ গুণগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এসব হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। চিকিৎসক, রোগী, নার্সসহ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধনের পরিবেশ রয়েছে। হাসপাতালগুলো সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। নোংরা পরিবেশ তো নেই, কিছু সময় পরপরই দেখা যায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের। রোগীদের সেন্ট্রালি মনিটর করা হয়।
মালয়েশিয়া হেলথ ট্যুরিজম কাউন্সিলের সিইও শেরিন আজলি বলেন, মালয়েশিয়ায় অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছেন। অনেকেই সেকেন্ড হোম হিসেবে মালয়েশিয়ায় আছেন। এখানকার রান্না-খাওয়া দাওয়া সবকিছুই হালাল। কাজেই মুসলিম দেশ হিসেবে মালয়েশিয়াকে নিজের দেশের মতোই মনে করতে পারেন বাংলাদেশ থেকে আগত রোগীরা। বাংলাদেশে আমাদের এজেন্সির মাধ্যমে সহজেই রোগীরা এ্যাপয়েন্টমেন্ট ও ভিসা করাতে পারবেন। আমরা বিমানবন্দরে রোগীদের জন্য আলাদা লাউঞ্জ রেখেছি। চিকিৎসার জন্য আসা পর্যটকরা বিমানবন্দরে পৌঁছলেই সেখানে তাদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। হাসপাতাল পৌঁছানো থেকে শুরু করে বাকি কাজটুকু এমএইচটিসি করে দেয়। তারা রোগীদের আস্থায় নিয়ে আসার জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। কঠিন চিকিৎসাও সহজভাবে তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিটি রোগীকে যতেœর সঙ্গে দেখা হয়। রোগী দেখার সময় কোন তাড়াহুড়া করা হয় না। রোগীকে অন্ততপক্ষে ২০-২৫ মিনিট সময় দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগী দেখা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের পুরো নির্দেশ মেনে চলতে হয়। একজন চিকিৎসকের জন্য সর্বোচ্চ দুইটি চেম্বার থাকতে পারবে। রোগীর কাছ থেকে কত টাকা ফি নেয়া হবে তাও সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে একজন চিকিৎসককে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আন্তর্জাতিক মানের বেশকিছু গবেষণাপত্র থাকতে হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
কেপিজে আমপাং পুত্রেই বিশেষায়িত হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ ইকা ফায়জুরা জানান, গত দুই বছরে হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সব যন্ত্রপাতি বদলানো হয়েছে। নতুন নতুন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে রোগীদের আধুনিক মানের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখানে সাকসেস রেট অনেক বেশি। আমাদের রোগীদের এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত ফোন ই- মেলের মাধ্যমে খোঁজ খবর রাখা হয়। এরপর ছয়মাস পর ফোনে ও ইমেলে আবার যোগাযোগ করি। সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে রোগীদের চিকিৎসার জন্য। রোগীর বেডের নিচে ওয়াই-ফাই সিট রাখা হয়। এখান থেকেই সেন্ট্রালি মনিটর করা হয় রোগীকে।
পেশেন্ট বিয়ন্ড বর্ডার্স নামক একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে বলা হয়েছে, হার্টের বাইপাস সার্জারিতে সিঙ্গাপুরে যেখানে ৫৪ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করতে হয়, সেখানে মালয়েশিয়ায় খরচ পড়ে মাত্র ২০ হাজার মার্কিন ডলার। থাইল্যান্ডের তুলনায়ও যা ১৩ হাজার মার্কিন ডলার কম। বাল্ব প্রতিস্থাপনে সিঙ্গাপুরের চেয়ে ৬৫ শতাংশ কম খরচ পড়ে মালয়েশিয়ায়। সিঙ্গাপুরে যেখানে এর জন্য খরচ করতে হয় ৪৬ হাজার মার্কিন ডলার, সেখানে মালয়েশিয়ায় তা ১৫ হাজার ডলার। আর থাইল্যান্ডে এই খরচ ১৯ হাজার মার্কিন ডলার। আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবি নিতে আগ্রহীদেরও কম খরচ পড়বে মালয়েশিয়ায়। ওষুধ খরচ ছাড়া আইভিএফের একটি সাইকেলে সেখানে খরচ পড়বে চার হাজার ২০০ ডলার, যা সিঙ্গাপুরের অর্ধেকেরও কম।
সূত্রঃ জনকণ্ঠ