দশটি বিতরণ জোনের মধ্যে যে তিনটি এলাকার পানিতে জনস্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর কলিফর্মসহ ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ ধরা পড়েছিল, তা দূর করতে কাজ চলছে বলে হাই কোর্টকে জানিয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
ঢাকা ওয়াসার আইনজীবী এ এম মাসুম বুধবার পানি দূষণ রোধে নেওয়া উদ্যোগের তথ্য বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চে তুলে ধরেন।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “ওয়াসা যদি সমস্যার সমাধান করতে পারে তাহলে ভাল। আমাদের দরকার বিশুদ্ধ পানি। আমরা বিশুদ্ধ পানি চাই।”
ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের মধ্যে তিনটি এলাকার পানিতে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ‘কলিফর্ম’ ব্যাকটেরিয়া পাওয়ার কথা জানিয়ে গত ৭ জুলাই হাই কোর্টে প্রতিবেদন দিয়েছিল চার সদস্যের একটি কমিটি।
তাদের প্রতিবেদনে আরও একটি এলাকায় নন-প্যাথজেনিক ব্যাকটেরিয়া পাওয়ার কথা জানানো হয়, যেগুলো নিজেরা ক্ষতিকর না হলেও ক্ষতিকর জীবাণুর আধার হতে পারে।
কমিটি বলেছিল, ওয়াসার দশটি বিতরণ জোনের পানিতেই মাঝারি বা অতি মাত্রায় পানি শোধনে ব্যবহৃত রাসায়নিকের উপস্থিত পাওয়া গেছে, যা স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
পরে আদালত ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য দুই সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছিল।
সে অনুয়ায়ী বিষয়টি বুধবার আদালতে উঠলে ওয়াসার পক্ষে আইনজীবী এ এম মাসুম এবং রিট আবেদনকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ শুনানি করেন।
মাসুম বলেন, হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ওয়াসা পাতলা খান লেইনের পানিতে ব্যকটেরিয়া আছে কিনা তা আইসিসিডিআর,বি ও বুয়েটের পরীক্ষা করতে দিয়েছিল। রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
আইনজীবী তানভীর তখন বলেন, “আদালতের আদেশের পরে পানি পরীক্ষার জন্য কমিটি গঠন করতে তিন মাস সময় লেগেছিল। আজ প্রতিবেদনের ওপর জবাব দাখিলের কথা ছিল।”
ওয়াসার আইনজীবী তখন বলেন, “মিরপুরের রিপোর্টটা রোববার পাওয়া যাবে। হাতে পেলে প্রতিবেদন আকারে তা আদালতে দাখিল করা হবে।”
বাংলাদেশের পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যবিধি ও দারিদ্র্য নিয়ে সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের খবর যুক্ত করে গত বছর ১৪ অক্টোবর হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। সে বিষয়ে শুনানি নিয়ে আদালত পানি পরীক্ষার নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করে।
ওয়াসার নিরাপদ পানি সরবরাহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং নিরাপদ পানি সরবরাহে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।
স্থানীয় সরকার প্রশাসন, স্বাস্থ্য সচিব, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
বিশ্ব ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ অপরিচ্ছন্ন এবং অনিরাপদ উৎসের পানি পান করছে। পাইপলাইনের পানির ৮২ শতাংশেই রয়েছে ই-কোলাই, যা পাকস্থলী ও অন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে।