চার ধাপে যেভাবে কমাতে পারবেন পেটের চর্বি

আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চর্বি জমার প্রবণতা দেখা যায়। ঠিক যেন গচ্ছিত সম্পদ। হাজার চেষ্টাতেও বিশেষত পেটে জমা চর্বি কিছুতেই ঝরতে চায় না। কিছু নিয়ম মেনে চললে জমে থাকা পেটের চর্বি থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

চারটা ধাপে কমাতে পারবেন পেটের চর্বি। আসুন দেখে নেই ধাপগুলো

প্রথম ধাপ: নিয়ন্ত্রিত খাবার

সবার আগে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে। খাদ্যতালিকা থেকে চিনি ও কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে অথবা কমাতে হবে। কোমলপানীয়র পরিবর্তে চিনি ছাড়া চা, মিষ্টির জায়গায় বাদাম ও ফল আর চিনির জায়গায় মধু গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে বাড়াতে হবে আঁশজাতীয় খাবার ও শাকসবজি খাওয়ার পরিমাণ।

দ্বিতীয় ধাপ: অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে প্রতিদিন ব্যয়াম

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দৌড়ান: প্রতিদিন অন্তত তিরিশ মিনিট দৌড়ালেই আমাদের শরীরে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়। শুরুতেই তিরিশ মিনিট করে দৌড়ানো কিছুটা অসম্ভব মনে হতে পারে। তাই শুরু করুন হাঁটা দিয়ে। সেই সাথে অল্প করে দৌড়। দৌড়ালে হাঁটার চাইতে আড়াই গুণ বেশি চর্বি ঝরে।

সাঁতার: দৌড়ানোর বিকল্প হতে পারে সাঁতার কাটা। সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনদিন না দৌড়ে সাঁতার কাটতে পারেন। পানির মধ্যে সামান্য নড়াচড়াতেও বেশি ক্যালরি ঝরে। দিনে এক ঘন্টা সাঁতার কাটলে ৫ শ ক্যালরি পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে।
 

সাইক্লিং: সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন স্বাভাবিক গতিতে সাইকেল চালালেও ওজন কমবে। দেখবেন, অধিকাংশ জিমেই ট্রেডমিলের পাশাপাশি সাইকেলও থাকে। প্রতিদিন দৌড়াতে ভালো না লাগলে সাঁতার এবং সাইক্লিং এর সাথে বদলে নিতে পারেন প্রতিদিনের ব্যয়ামের রুটিন।

তৃতীয় ধাপ: অ্যাবস দৃঢ় করুন

কার্ডিও ধরণের ব্যয়াম অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করলেও পেট একদম টানটান বানাবে তা নয়। এমন ব্যয়াম বেছে নেওয়া উচিৎ আমাদের যেগুলো পেশির শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ওজনও কমাবে। দেখে নেই এমন কিছু ব্যয়াম।

ভ্যাকুয়াম: পেটের চর্বি কমানোর দারুণ ব্যয়াম। ভ্যাকুয়াম এক ধরণের শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যয়াম। এটি করতে ফুসফুস থেকে সমস্ত বাতাস বের করে দিতে হবে। সেই সাথে পেট যতটা সম্ভব মেরুদন্ডের দিকে টেনে নিতে হবে। দশ থেকে পনেরো সেকেন্ড এভাবে নিঃশ্বাস ধরে রাখতে হবে।

দিনে তিন থেকে চার মিনিট করে কয়েক সপ্তাহ অভ্যাস করলেই কোমরের চর্বি কমেছে দেখা যাবে।
 

প্ল্যাঙ্ক: সাধারণ কিন্তু দারুণ কার্যকরী ব্যয়াম। দুই হাতের কনুই ও পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে পুরো শরীর উপরে তুলতে হবে। পেট, পিঠ, পা সবই মেঝের সমান্তরালে থাকবে, পিঠের দিকে উঁচু হয়ে বাকিয়ে যাবে না।

দিনে দুই থেকে তিনবার অন্তত ৩০ সেকেন্ড করে প্ল্যাঙ্ক অভ্যাস করলে উপকার পাবেন। তবে চেষ্টা করুন ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে। এই ব্যায়াম নিয়মিত করলে পেটের পেশি শক্তিশালি হয়, পিঠে ব্যাথা কমায় ও শারীরিক গঠন দৃঢ় করে।

চতুর্থ ধাপ: অ্যাবস বা পেটের পেশি দৃঢ় করুন

ক্রাঞ্চেস: এধরণের ব্যয়ামে পেটের পেশি যেমন দৃঢ় হবে তেমনি শক্তিশালী হবে আমাদের শরীরের কোর বা মধ্যাঞ্চল। কোর বা মধ্যাংশ বাকি শরীরকে ধরে রাখে। তাই এই অংশ শক্তিশালী হলে অন্যান্য পেশির উপর চাপ কমে। পেটের পেশি শক্তিশালী করতে নানারকম ক্রাঞ্চ ধরণের ব্যয়াম অভ্যাস করতে পারেন।
 

পা ওপরে ওঠানো ব্যয়াম: মেঝে বা শক্ত কোন পাটাতনে টানটান হয়ে শুয়ে পা উপরে তুলতে হবে। হাতের উপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে কোমর থেকে পা উপরে তুলতে হবে। দিনে দশ থেকে পনেরো বার অভ্যাস করলে তিরিশ দিনেই পেটের পেশিতে পার্থক্য দেখবেন।
 

মনে রাখা ভালো: যেকোন ব্যয়ামের পরেই ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা ভালো। ব্যয়ামের ফলে আমাদের শরীর থেকে বের হওয়া ল্যাকটিক এসিড নির্গমনের পরিমাণ কমায় ঠান্ডা পানি। এই ল্যাকটিক এসিড পেশি ব্যথার জন্য দায়ী। একই সাথে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর নিজেকে উষ্ণ করতে  অতিরিক্ত ক্যালরি ব্যয় করে। তাই ব্যয়ামের পরেও শরীর ক্যালরি ব্যয় থামিয়ে দেয় না।

পেটে চর্বি জমার সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। একবার জমলে আর সহজে কমতে চায় না। উপরোক্ত চারটি ধাপ অনুসরণ করলে পেটে জমা অতিরিক্ত চর্বি থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

সুত্র ঃ সারাবাংলা

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *