আমাদের সারা দিনের খাদ্যতালিকার অন্যতম উপাদান হচ্ছে শর্করা। ভাত তার প্রধান মাধ্যম। যত কিছুই খাই না কেন ভাত না খেলে ঠিক তৃপ্তি আসে না। একদিন অথবা এক বেলা ভাত না খাবার কথা আমরা চিন্তাই করতে পারি না। প্রতিদিন দুই বেলা, কখনো কখনো তিন বেলাই ভাত খাওয়া হয়।
আবার অনেকেই পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারেন না। কোল্ড ড্রিংকস পানের কারণে তো পানি পানের প্রয়োজনীয়তা অনেক সময়ই আমরা ভুলে যাই। ভাত, পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, কোল্ড ড্রিংকস সবকিছুই শর্করা খাবারের একেক রূপ। অতিরিক্ত শর্করা খাবারের ফলে আমাদের শরীরে কত সমস্যা হচ্ছে তার কিছুই আমরা জানি না।
অতিরিক্ত শর্করা খাবারের জন্য আমাদের শরীরে রক্তশূন্যতা হতে পারে, তা কি আমরা জানি? নিশ্চয়ই খুব অবাক হচ্ছেন। আপনার খাবারে হয়তো আয়রনের ঘাটতি নেই। কিন্তু আপনার খাবার শর্করা দিয়ে ভরপুর। শর্করা জাতীয় খাবারে উচ্চমাত্রায় ফসফেট ও ফাইটিক অ্যাসিড থাকে। শর্করা খাওয়ার পরে খাদ্যনালিতে গিয়ে খাবারে থাকা আয়রনের সঙ্গে মিশে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আয়রন ফসফেট এবং ফাইটেট তৈরি করে, যা পানিতে অদ্রবণীয়। এই আয়রন ফসফেট ও ফাইটেট খাদ্যনালি থেকে শোষিত হয়ে রক্তে যেতে পারে না।
আপনি হয়তো আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাচ্ছেন কিংবা আয়রন ঘাটতির জন্য ওষুধ খাচ্ছেন। কিন্তু আপনার খাবারের আয়রন কতটুকু রক্তে যাচ্ছে তা অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আপনার খাদ্যতালিকায় শর্করার পরিমাণ কতটুকু বা আপনার খাদ্যাভ্যাস কেমন? কিছু পাওয়া না গেলেও বাংলার মাঠেঘাটে কচুশাক কিন্তু পাওয়াই যায়। এক গামলা ভাত কচুশাক দিয়ে খেয়ে ফেললাম। ভাবলাম আহ! কত আয়রন খেলাম। কিন্তু বুঝতেই পারলাম না, শুধু ভাতের জন্য আমাদের খাবারের আয়রন শোষণ হয়ে রক্তে যেতে পারছে না।
আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য জরুরি উপাদান। প্রয়োজনীয় পরিমাণ আয়রন না থাকলে হিমোগ্লোবিন তৈরি বাধাপ্রাপ্ত হবে। ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দেবে। আমাদের দেশের মেয়েদের রক্তশূন্যতা বেশি। একে তো খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা তার ওপর যদি প্রতি মাসে ঋতুস্রাব, গর্ভধারণ, বাচ্চাকে দুগ্ধপান ইত্যাদি কারণে শরীর থেকে আয়রন বের হয়ে যায়, তাহলে রক্তশূন্যতা হতে বাধ্য। তাই শুধু আয়রন ট্যাবলেট বা আয়রনযুক্ত খাবার খেলেই হবে না। সঙ্গে খাবারের শর্করার পরিমাণও পরিমিত রাখতে হবে, যাতে শর্করা আয়রনকে শোষণ করে নিতে না পারে।