আপনি সম্ভবত এটা মেনে নেবেন যে মধ্যবয়সে পৌঁছলে আপনার জয়েন্ট নমনীয়তা হারাতে শুরু করবে। কিন্তু আপনার দৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্রেও একইরকম ফল আপনি সম্ভবত প্রত্যাশা করবেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমনটা ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার দৃষ্টি কোনো আর্টিকেলের লেখার ওপর ফোকাস করতে বেঁকে যায়।
জেনে রাখা ভালো যে, আপনি চল্লিশে পৌঁছতে পৌঁছতে চোখের লেন্স শক্ত হয়ে যাবে, যার ফলে নমনীয়তা হ্রাস পাবে ও ছোট লেখা পড়া অধিক কঠিন হয়ে পড়বে। এ সমস্যাকে প্রেসবায়োপিয়া বলে এবং এটি নিরাময় করা যায় না।
আই-কেয়ার কোম্পানি অ্যালকনের সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, ডাক্তাররা জানান যে ৪০ ও ততোর্ধ্ব বয়সের ৯২ শতাংশ লোক প্রেসবায়োপিয়া সম্পর্কে জানেন না, যদিও প্রায় ৯৯ শতাংশ লোকের এ সমস্যার উপসর্গ রয়েছে। প্রেসবায়োপিয়া সম্পর্কে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব অপথালমোলজির ক্লিনিক্যাল মুখপাত্র ব্রেন্ডা প্যাগান বলেন, ‘অনেক লোকে বুঝতে পারেন না যে তাদের চোখে কি হচ্ছে। তারা ভাবেন যে কিছু একটা গণ্ডগোল তো হয়েছে এবং তা স্বাভাবিক একটি বিষয়।’
বয়স বাড়তে থাকলে চোখ কাছের বস্তু দেখার ক্ষমতা হারাতে থাকে। এটি কোনো ছোটখাটো বিষয় নয়। এ সমস্যাকে অবহেলা করলে আপনার অবস্থা এমনও হতে পারে যে, আপনি কিছুই পড়তে পারছেন না অথবা আপনি সূক্ষ্ম কাজ করতে পারছেন না। সকলের জন্য সুখবর হলো, প্রেসবায়োপিয়া সহজে শনাক্ত ও সমাধান করা যায়। এখানে এ সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন তা উল্লেখ করা হলো।
* প্রেসবায়োপিয়া কী?
প্রেসবায়োপিয়ার উৎপত্তি হয়েছে একটি গ্রীক শব্দ থেকে, যার অর্থ পুরোনো চোখ। বয়স ২০ এর শুরুর দিকে একজন মানুষের চোখের লেন্স শক্ত হতে শুরু করে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ সমস্যাটি অনুভব করে ৪০ এর ঘরে পা রাখলে, যখন তারা পত্রিকার লেখা পড়তে পারে না অথবা সেলাইয়ের কাজ করতে পারে না। বয়স ৬৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত চোখের লেন্স শক্ত হতে থাকে।
আপনার পূর্বে কোনো দৃষ্টি সমস্যা না থাকলেও প্রেসবায়োপিয়া এড়াতে পারবেন না, যদিও কিছু লোকের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি বিলম্বে আসে অথবা উপসর্গ হালকা হয়। যদি আপনি খাবারের মেন্যুকে আরো দূরে নেন অথব কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে আরো দূরে সরে যান, তাহলে অনুমান করতে পারেন যে আপনার চোখ নমনীয়তা হারাচ্ছে।
* কখন চিকিৎসা নেয়া উচিত?
অধিকাংশ লোক ততক্ষণ পর্যন্ত ডাক্তারের কাছে যান না যতক্ষণ পর্যন্ত না এ দৃষ্টি সমস্যা দৈনন্দিন জীবনকে বিঘ্নিত করছে। অপথালমোজিস্টদের একটি কমন কৌতুক হলো, রোগীরা কেবলমাত্র তখনই ডাক্তারের কাছে ছুটেন, যখন তাদের বাহু খুব খাটো হয়ে যায়- এর মানে হলো, স্ক্রিনের ওপর ফোকাস করতে তারা তাদের ফোনকে আর দূরে নিতে পারে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, যখনই প্রেসবায়োপিয়ার উপসর্গ শনাক্ত করবেন তখনই ডাক্তারের কাছে ভিজিট করা উচিত। এ সমস্যায় চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করলে চোখে অনবরত চাপ পড়ে। চোখের ওপর অনবরত চাপ মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, এর ফলে আপনার পক্ষে কোনো কিছু পড়া অথবা অন্য কোনো সূক্ষ্ম কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। চোখে প্রতিনিয়ত চাপ পড়লে মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন।
প্রেসবায়োপিয়ার লক্ষণ
প্রেসবায়োপিয়ার এ লক্ষণগুলো দেখা দিলে উপেক্ষা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন-
* কোনোকিছু পড়া অথবা সূক্ষ কাজ করতে সমস্যা হওয়া
* চোখে চাপ পড়া
* চোখ বাঁকিয়ে অথবা এক বা উভয় চোখ আংশিক বন্ধ করে কিছু দেখা
* মাথাব্যথা।
এটা মনে রাখা ভালো যে, কিছু ওষুধ (যেমন- অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট, অ্যান্টিহিস্টামিন ও ডিউরেটিক) প্রেসবায়োপিয়া দ্রুত করতে পারে।
* প্রেসবায়োপিয়া প্রতিরোধ করা যায়?
দুঃখের বিষয় হলো, প্রেসবায়োপিয়া প্রতিরোধ করা যায় না এবং এটি রিভার্সও করা যায় না, অর্থাৎ চোখের লেন্সকে নমনীয় করা যায় না। যদি আপনি সেলাই, লেখাপড়া অথবা কম্পিউটার স্ক্রিন সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে চোখের ওপর চাপ কমাতে প্রতিঘণ্টায় ১০ মিনিটের বিরতি নিন। চোখকে বিশ্রাম দিতে মধ্য অথবা দূরবর্তী বস্তুর দিকে তাকান।
* প্রেসবায়োপিয়ার সর্বোত্তম চিকিৎসা কী?
প্রেসবায়োপিয়া সমস্যার একাধিক সমাধান রয়েছে। সবচেয়ে সাধারণ সমাধান হলো চশমা পরা। আপনি স্পেশাল কন্টাক্ট লেন্সও পরতে পারেন অথবা ভিশন সার্জারিও করতে পারেন। যদি আপনি ইতোমধ্যে চশমা পরে থাকেন, তাহলে বাইফোকাল, ট্রাইফোকাল অথবা প্রগ্রেসিভ লেন্স আপনার প্রেসবায়োপিয়া সমস্যা সমাধান করতে পারে। আপনি মনোভিশন কন্টাক্ট লেন্সও ব্যবহার করতে পারেন, যেখানে দু’চোখে দুটি লেন্স লাগানো হয়- একটি লেন্স দূরদৃষ্টিকে সহায়তা করে ও অন্য লেন্সটি কাছের বস্তু দেখতে সাহায্য করে। মাল্টিফোকাল কন্টাক্ট লেন্সও রয়েছে, যা বাইফোকাল চশমার অনুরূপ। আপনি চশমা ও লেন্স ব্যবহারে বিরক্তিবোধ করলে রিফ্র্যাক্টিভ সার্জারি করতে পারেন। কর্নিয়াল ইনলে নামক সার্জারির মাধ্যমে দ্রুত ও সহজে প্রেসবায়োপিয়ার চিকিৎসা করা যায়।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট