সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবা মূলত শহরকেন্দ্রিক। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে চাহিদার বিপরীতে চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফসহ জনস্বাস্থ্যকর্মীর ব্যাপক সংকট রয়েছে।
এই সংকটের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, তদারকি ও সুশাসনের কার্যকরী কাঠামোর অভাব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার অভাব, সেবাদানকারীদের জন্য পর্যাপ্ত প্রণোদনার অভাব, প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসকদের নাগরিক জীবনযাপনের নূন্যতম সুযোগ-সুবিধা না থাকা।
বিশেষ করে চিকিৎসকদের সন্তানদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যাবৃদ্ধিসহ নানা সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যসেবা খাতের অবস্থা প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অনুমোদিত পদের বিপরীতে প্রায় ২০.৪ শতাংশ পদ খালি পড়ে রয়েছে। যা সার্বিকভাবে সরকারি খাতে এই চিকিৎসক সংকট সৃষ্টি করছে।
একইসঙ্গে ৭৮৩ পদের বিপরীতে প্রায় চার হাজার ৭৪৯ জন চিকিৎসক বিশেষ ভারপ্রাপ্ত (ওএসডি) পদে ঢাকা বিভাগেই নিযুক্ত আছেন। এতে করে বাংলাদেশের জেলা শহরে সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসক সংকট মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সমন্বিতভাবে এ থেকে সমাধানের পথ বের করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (২০ জুলাই) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সরকারি স্বাস্থ্যখাতে চিকিৎসকের সুষম বণ্টন’ শিরোনামে স্বাস্থ্যনীতি সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন। স্বাস্থ্যনীতি সংলাপ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থিত, আইসিডিডিআর,বি এর ‘স্ট্রেন্থেদেনিং হেলথ, অ্যাপ্লায়িং রিসার্চ এভিডেন্স (শেয়ার)’ প্রকল্পের উদ্যোগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম শুরু করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় চতুর্থবারের মতো স্বাস্থ্য বিষয়ক সংলাপটির আয়োজন করা হয়।
সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বি’র ইউনিভারসাল হেলথ কভারেজ কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক ও বিজ্ঞানী ডা. ইকবাল আনোয়ার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্যায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত পদ্ধতিতে কাজ করার মাধ্যমে সমাধানে আসতে হবে। তবেই সমস্যাগুলো মেটানো সম্ভব হবে। আমাদের মানবসম্পদ অপ্রতুল। আজ প্রতিদিনের তথ্য আমরা প্রতিদিন পাচ্ছি। অতীতে সেই তথ্যগুলোও আমাদের হাতে ছিল না। আজ ডিজিটাল তথ্য ব্যবস্থাপনার কারণে আমরা তা জানতে পারছি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক পদায়নের চেষ্টা করছি।
এছাড়া তিনি সংলাপে এ সমাধানগুলো নিয়ে মূলত আলোচনা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের সংলাপে শুধু সমস্যাগুলো নিয়ে আলাপ করা হয়। কিন্তু সমাধানগুলো বলা হয় না। যেটা বেশি দরকার। সমস্যাগুলো অনেক পুরানো, তাই সমাধানটাই জরুরি। আর আমাদের তদবির সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। নইলে এসব সমস্যার সমাধান কঠিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এমএ. ফয়েজের সভাপতিত্বে সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয় ও সহায়তা কেন্দ্রের সমন্বয়কারী ডা. মুশতাক আহমেদ, ঢাবির স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএ হামিদসহ সারাদেশ থেকে আগত স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা।
সংলাপে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সরকারি স্বাস্থ্যখাতে চিকিৎসকের যথাযথ পদায়নে বিভিন্ন সমস্যা ও বাস্তবধর্মী সমাধানে পৌঁছাতে মুক্ত আলোচনা হয়। স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সব কার্যালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজন মতো চিকিৎসকের পদায়নের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন আলোচকরা।
সুত্র ঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম