মনরোগ বিশেষজ্ঞ এবং লেখক ডা. ড্রিউ র্যামসি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করেছেন ভিন্নধর্মী এক চিকিৎসা কেন্দ্র, নাম ‘ব্রেইন ফুড ক্লিনিক’, যেখান থেকে রোগীদের ওষুধ দেওয়া হয় না বরং খাবারের তালিকা দেওয়া হয়।
নতুন ধরনের এক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার হয় এখানে যার নাম ‘নিউট্রিশনাল সায়কায়াট্রি’। মস্তিষ্ক, পুষ্টি ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নিত্য নতুন গবেষণা ও আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়ে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করছেন তারা।
স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তাদের এই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হয় যে, কীভাবে খাবারের মাধ্যমে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।
দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস: মস্তিষ্কের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস আর হৃদযন্ত্র ভালো রাখা ও ওজন কমানোর খাদ্যাভ্যাসের সবই প্রায় একই কথা বলে। চিনি, প্রক্রিয়াজাত ও চর্বিযুক্ত খাবার কমাতে হবে আর উদ্ভিজ্জ খাবার যেমন- ফল, সবজি ও শষ্যজাতীয় খাবার খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, জাপানি ও নরওয়ের মানুষের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা যেতে পারে। কারণ এদের সবগুলোতেই থাকে প্রচুর পরিমাণে শষ্যজাতীয় খাবার, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ‘ফার্মেমেন্টেড’ খাবার থাকে। সুস্থ শরীর ও প্রফুল্ল সবগুলো উপাদানই মিলবে এগুলো থেকে। বিশেষত, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাসের মূল উপাদান হল বিভিন্ন শষ্য, লতা-গুল্ম, সামুদ্রিক খাবার এবং পত্রল সবজি যা অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। মস্তিষ্কের উপর সরাসরি এর উপকারী প্রভাব পড়ে।
ওই প্রতিষ্ঠানের পুষ্টিবিদ হেতাল শেডা বলেন, “স্বাস্থ্যকর খাবার জাগায় ইতিবাচক চিন্তাধারা, শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়, ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ কমায়। এছাড়াও মেজাজ ও আচরণ ভালো রাখে।”
অন্ত্র আর মস্তিষ্কের সম্পর্ক: যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ মাঞ্জারি চন্দ্র বলেন, “মানসিক সুস্বাস্থ্যের দিক থেকে চিন্তা করলে প্রথমেই ভাবতে হবে অন্ত্রের কথা, কারণ মন ভালো রাখার জন্য ‘সেরাটোনিন’ গ্রহণ করার গ্রন্থির ৯০ শতাংশই থাকে সেখানেই। অর্থাৎ অন্ত্র, প্রদাহ আর মস্তিষ্কের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে একথা পরিষ্কার। অন্ত্রে কোনো প্রদাহ দেখা দিলে তা মস্তিষ্কের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে অর্থাং মন-মেজাজ খারাপ থাকবে। তাই মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করতে হবে আর রঙিন ও ভোজ্য-আঁশে ভরা খাবার খাওয়া বাড়াতে হবে।”
‘ব্রেইন ফুড ক্লিনিক’য়ের চিকিৎসক ডা. র্যামসে রঙিন খাবার খাওয়া গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রংধনুই খেয়ে ফেলতে বলছেন। এই খাবারের তালিকায় থাকবে মরিচ, ব্লুবেরি, মিষ্টি আলু, টমেটো ইত্যাদি। এগুলোতে থাকে ‘ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট’ যা শরীরের যেকোনো স্থানে প্রদাহ হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়। ‘ফার্মেন্টেড’ খাবার যেমন- দই, ঘোল, আচার, টক দই ইত্যাদিও অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ যা পক্ষান্তরে দূরে রাখবে মানসিক অস্বস্তি, হতাশাগ্রস্ততা থেকে।
প্রতিদিন ‘ফার্মেন্টেড’ খাবার খাওয়া অন্ত্রের যত্ন নেবে, ক্ষুদ্রান্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে। ‘ডার্ক চকলেট’য়ে থাকা ‘ফ্লাভানয়েড’ নামক ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। ফলে মন ভালো থাকবে, বাড়বে স্মৃতিশক্তি।
হতাশা দূর করাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ও তার উৎস
লৌহ: স্যামন মাছ, মুরগির মাংস, রান্না করা বীজ-জাতীয় খাবার, কুমড়ার বীজ, বাদাম, ‘অ্যাপ্রিকট’, কিশমিশ ও পালং শাকে মিলবে লৌহ।
ওমেগা থ্রিএস: এই ফ্যাটি অ্যাসিড স্মৃতিশক্তি, চিন্তাশক্তি বাড়ায়, মন ভালো রাখে। পাওয়া যাবে স্যামন, ম্যাকারেল, হেরিং সার্ডিনস ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, বীজ, নারিকেল, জলপাই, তিল ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ উৎসের তেল থেকে।
ফোলেট: গাঢ় সবুজ রংয়ের শাকসবজি, ডাল, সূর্যমূখীর বীজ, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি থেকে পাওয়া যাবে এই পুষ্টি উপাদান।
ভেষজ উপাদান: জিনসেং, ক্যামোমাইল, ল্যাভেন্ডার, জাফরান ইত্যাদি মানসিক অবস্থা ভালো রাখে, দূরে রাখে হতাশা, মানসিক অস্বস্তি। উন্নতি হয় ঘুমেরও।
সুত্র ঃ বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর