দেশের ৫০ শতাংশ চিকিৎসা সেবা আসছে বেসরকারি খাত থেকে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দেশের ৫০ শতাংশ চিকিৎসা সেবা বেসরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো থেকে আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে অধিকতর কার্যকরী ও মানসম্পন্ন করা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান। স্বাস্থ্য অধিদফতর এ সেমিনারের আয়োজন করে। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসায় বেসরকারি সেক্টরে ৫০ শতাংশ চিকিৎসা সম্পন্ন হলেও আমরা তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। অনেক সমস্যার কথা আমরা শুনি। কিন্তু সমাধান করতে পারি না। কেননা আমাদের সেই চর্চা নেই। আমাদের ক্ষমতা রয়েছে দুর্নীতিগ্রস্ত যেকোনো হাসপাতালকে বন্ধ করে দেওয়ার। কিন্তু আমরা তা করতে পারছি না আমাদের চিকিৎসকদের সংযুক্তি বা যারা এ দায়িত্বে আছেন, তাদের সদিচ্ছা না থাকার কারণে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশের চিকিৎসা খাতে মেডিকেল হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) রোগীদেরকে এন্টিবায়োটিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করছে। এ ধরনের কাজ সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। তাদেরকে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার জন্য। এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করতে পারবে শুধুমাত্র এ সংক্রান্ত বিষেজ্ঞ বা চিকিৎসকরা। আমাদেরকে এ বিষয়ে জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের শিশু-কিশোরদেরকে ও চিকিৎসায় শিক্ষিত করতে হবে। আমাদের প্রাইমারি হেলথ কেয়ার ব্যবস্থাপনা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের থেকে উন্নত। রোগ প্রতিরোধে শুরু হয় এই প্রাইমারি হেলথ কেয়ার থেকে। যার মাধ্যমে দেশের জনগণ নিজেরাই নিজেদের সেবা করতে পারবে। এই সেবাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। কেননা দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে এই সেবা পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এটাকে বন্ধ করতে হবে।’

নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রোগগুলো আমাদের দেশে বাড়ছে। এজন্য আমাদের জীবনযাত্রার মান পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। কেননা আমরা এই ধরনের রোগ প্রতিরোধে এখনো প্রস্তুত না। তাই এটাকেও প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের অন্তর্গত করতে হবে।’

চিকিৎসকদের মেডিকেল প্র্যাক্টিস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের রেফারেল সিস্টেম এখনো দুর্বল। চিকিৎসকদের এক্ষেত্রে আরও মনোযোগী হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। এছাড়া চিকিৎসকদেরকে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সময় কমাতে হবে। সরকারি হাসপাতালে তাদেরকে বেশি সময় দিতে হবে। দুই ধরনের প্র্যাকটিস বিশ্বের অন্যান্য দেশে নাই। এ ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বেতন বাড়ানোর কথা আমরা ভাবছি।’

স্বাস্থ্য খাতে বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাজেটে মেনটেনেন্সের জন্য মাত্র ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু এ বরাদ্দ প্রয়োজন ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা। বাজেটের দিকে আমরা আরও নজর বাড়াব। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা করে বাজেটের বিষয় নির্ধারণ করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের এনজিওগুলো স্বাস্থ্য খাতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। তারা নিজেরাও কাজ করছে না, আমাদেরকেও দিচ্ছে না। এতে আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা নজরদারি বাড়াচ্ছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর বাইরে কর্মকর্তাদের সংস্পর্শ বেশি। এটা অবশ্যই কমাতে হবে।’

সেমিনারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক পাঁচটি জাতীয় গাইডলাইনের মোড়ক উন্মোচন করেন। গাইডলাইনগুলো হলো- ন্যাশনাল স্ট্র‍্যাটেজিক প্ল্যানিং অব পেশেন্ট সেফটি, ন্যাশনাল গাইডলাইন অব ইনফেকশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল, অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল স্টেয়ার্ডশিপ কিউআই ফ্রেমওয়ার্ক, ন্যাশনাল আর এমএনসিএএইচ কিউআই ফ্রেমওয়ার্ক, ন্যাশনাল আইসিইউ কিউআই ফ্রেমওয়ার্ক।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফায়েজ, ইউএনএফপিএ’র সিনিয়র উপদেষ্টা ডা. এস এ জে মো. মুসা, অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ ইকনোমিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম এ হামিদ, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ ইকবাল আনোয়ার, অধ্যাপক ডা. মো. লিয়াকত আলী, ডা. মো. আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।

সুত্র ঃ বার্তা২৪

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *