চুল পড়ার অন্যতম কারণ হরমোনজনিত সমস্যা

মানবদেহে হরমোন হচ্ছে শক্তিশালী কিছু কেমিকেল যা আমাদের দেহের স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখতে সহায়তা করে। আমাদের দেহে প্রাকৃতিকভাবে হরমোন উৎপন্ন হয় এবং বিভিন্ন উপায়ে দেহে প্রভাব বিস্তার করে  দেহে হরমোন নিঃসরণকারী বহু গ্রন্থি আছে। নালীবিহীন ও নালীযুক্ত। নালীবিহীন গ্রন্থিগুলোকে এন্ডোস্ক্রিন গ্লান্ড বলা হয়। এ সকল গ্লান্ড নিঃসৃত হরমোন আমাদের দেহে বিপাকীয়সহ স্বাভাবিক সব কাজকর্ম বজায় রাখে। তাই এ ধরনের গ্রন্থির কার্যকারিতা ব্যাহত হলে দেহের বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চুলপড়া।
এবার আসুন আলোচনা করি যে, কোন কোন গ্রন্থির বা গ্লান্ডের সমস্যায় চুল পড়তে পারে। এটা প্রতিষ্ঠিত যে, চুলপড়ার অনেক কারণের মধ্যে হরমোনজনিত কারণ অন্যতম হলেও এটা এখনও জানা যায়নি যে, কেমন করে চুলপড়া সমস্যার সৃষ্টি হয়। প্রথমেই আলোচনা করছি পিটুইটারি গ্লান্ড বা গ্রন্থি নিয়ে। দেখা গেছে পিটুইটারি হরমোন কম নিঃসৃত হলে মানুষের আকৃতি দেখাবে বামনের ন্যায়। আর বামনদের মাথায় সাধারণত চুল থাকে না বা কম থাকে। যৌবন প্রাপ্তির পর যদি পিটুইটারি হরমোনের ঘাটতি দেখা দেয়- যেমন সিহান’স সিনড্রোম নামক রোগের অবস্থায় এক্ষেত্রে মাথার চুল পাতলা হয়ে যাবে, বগলের এবং নাভীর নিচের পশম সম্পূর্ণভাবেই বিলুপ্তি ঘটবে। ত্বক দেখতে দেখতে হলুদাভ, শুষ্ক ও ত্বকের বৃদ্ধিও ব্যাহত হবে।
থাইরয়েড গ্লান্ড বা গ্রন্থির সমস্যায় চুলপড়াঃ থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোনের ঘাটতিজনিত অবস্থা বা হাইপোথাইরিডিজম ক্ষেত্রে সারা মাথা জুড়েই চুল পড়তে পারে এবং পরবর্তীতে শরীরের চুলও পড়ে যেতে পারে। ভুরুর লোমও সুস্পষ্টভাবে হালকা হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে বগলের পশমও শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে কমে যেতে পারে । ট্রাইকোগ্রাম পরীক্ষা দ্বারা দেখা গেছে যে, চুলের যে জীবনচক্র রয়েছে তার শতকরা আশি ভাগ টেলোজেন অবস্থায় রয়েছে। এতে ধারণা করা যায় যে, হয়তো টেলোজেন অবস্থার স্থায়িত্ব দীর্ঘতর হচ্ছে অথবা তারাতাড়ি ক্যাটাজেন অবস্থা শুরু হতে পারে, অথবা উভয় অবস্থা হতে পারে। হাইপোথাইরয়েডিজম অবস্থায় চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণে আনলে চুল আবার নতুন গজানো শুরু হবে তবে এই বৃদ্ধি অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। অনেক সময় হাইপোথাইরয়েডিজম রোগে শুধুমাত্র চুলপড়া সমস্যাই প্রধান উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। হাইপোথাইরয়েডিজম রোগ নিশ্চিত করতে হলে ক্লিনিক্যাল নির্ণয়ের পর রক্তের টিএসএইচ (থাইরয়েড সিটুমুলেটিং হরমোন ) মাত্রা নির্ণয় করতে হবে। আয়োডিন ঘাটতিজনিত যে হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা যায় সেইক্ষেত্রে চুলপড়া সমস্যা সাধারণত দেখা দেয়। এক্ষেত্রে রক্তে প্রোটিন সংযোক্ত আয়োডিন মাত্রা বেশী থাকবে।
এতক্ষণ থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিজনিত সমস্যায় চুলপড়া নিয়ে আলোচনা করা হলো। এবার দেখব যে থইরয়েড গ্রন্থি অতিমাত্রায় কাজ করলে অথবা হাইপোথাইরয়েডিবাম রোগে চুলের অবস্থা কি হয়। এক্ষেত্রে দেখা যাবে যে, শতকরা চল্লিশ থেকে ৫০ ভাগ রোগীর চুলপড়া সমস্যা রয়েছে তবে কদাচিৎ মাত্রাতিরিক্ত অবস্থা দেখা যায়। চিকিৎসার পর এ রোগের চুল পড়া সমস্যা ভালো হয়ে যেতে পারে। হাইপোথাইরয়েড রোগে চুলে টাক খাওয়া অবস্থা ও শে^তী অবস্থাও এক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে। প্যারাথাইরয়েডনামক যে গ্রন্থি আমাদের দেহে রয়েছে, যদি তার কার্যকারিতা স্বাভাবিকতার চেয়ে কমে যায় তাহলে মাথায় চুলের অবস্থা দেখা যাবে যে, চুল মোটা, হালকা ও শুষ্ক হয়ে গেছে এবং এই অবস্থায় চুল সামান্য আঘাতেই ঝড়ে যেতে পারে, ফলে মাথায় অসমাকৃতির টাক দেখা দিতে পারে। শুধু হাইপোপ্যারাথাইরয়েড রোগেও চুলের একই অবস্থা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস রোগেও অনেক সময় চুল পড়ে পাতলা হয়ে যেতে পারে । এতে চুলের টেলোজেন ইফ্লুভিয়াম অবস্থা দেখা দিতে পারে ।
গর্ভাবস্থায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবনে চুল পড়ার কথা বলা হলেও এটা বিতর্কিত ধারণা। সাধারণত কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না দেখা গেলেও কিছু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে পিল বন্ধ করার পর তিন চার সপ্তাহ চুল ঝরতে পারে। ঘটনাটা প্রসবোত্তরকালে ঘটে থাকে। তবে এ অবস্থার পরিবর্তন হতে কয়েকমাস লেগে যেতে পারে।

সুত্র ঃ দৈনিক সংগ্রাম

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *