বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ বিভিন্ন ধরনের থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত। সে হিসাবে, দেশের ৫ কোটি মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন। এদের মধ্যে ৩ কোটি মানুষই এ সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানেন না ও তাদের বেশিরভাগই গ্রামে বসবাস করেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিপুল সংখ্যক মানুষ এ সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পরও নীতি-নির্ধারক, চিকিৎসা সেবাদানকারী ও চিকিৎসাগ্রহণকারী সবার মধ্যেই রোগগুলো সম্পর্কে সচেতনতা, উদ্যোগ ও পদক্ষেপের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার আগেই এটি প্রতিরোধ সম্ভব বলেও মনে করেন তারা।
২৫ মে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল মিলনায়তনে আয়োজিত সচেতনতামূলক সভায় এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশকে আয়রন ঘাটতির অঞ্চল উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ ভূখণ্ডে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ঘাটতি থাকার পরও মাত্র ১৫০ জন এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট রয়েছেন। অথচ আয়রন ঘাটতির ফলে থাইরয়েড সমস্যার মতো মারাত্মক সব রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। এ সম্পর্কে জনগণ খুব বেশি জানেও না।
এ কারণে নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের তালিকায় দ্রুত থাইরয়েড সম্পর্কিত রোগগুলোকে সংযুক্ত করা ও উন্নতমানের ল্যাব প্রতিষ্ঠার দাবি জানান তারা।
চিকিৎসকরা বলেন, বর্তমানে দেশের মানুষের শরীরে অতিরিক্ত অ্যান্টিবডির সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এটা ক্ষতিকর। থাইরয়েডজনিত সমস্যা বিশ্বের এক নম্বর রোগ। বাংলাদেশে সম্ভাব্য থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। এরমধ্যে প্রায় ৩ কোটি রোগীই জানেন না তাদের এ সমস্যা রয়েছে। তাই, এ রোগ প্রতিরোধ কিংবা চিকিৎসার ক্ষেত্রে জনসচেতনতাই মুখ্য। থাইরয়েড হরমোন কম বা বেশি নিঃসৃত হওয়া উভয়ই রোগের সৃষ্টি করে। তাই বিয়ে ও গর্ভধারণের আগে নারীদের অবশ্যই থাইরয়েড পরীক্ষা ও এ রোগের সম্ভাবনা থাকলে যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে তারপর গর্ভধারণ করা উচিৎ। নাহলে, বাচ্চাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। থাইরয়েড রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। একজন পুরুষের বিপরীতে ১০জন নারী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত।
বক্তারা বলেন, থাইরয়েড গ্রন্থি গলার সামনের দিকে প্রজাপতিসদৃশ একটি গ্রন্থি, যা ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালী পেঁচিয়ে থাকে। ছোট গ্রন্থি হলেও এর কার্যকারিতা ব্যাপক। থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন মানব পরিপাক প্রক্রিয়ায় অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ভ্রুণ অবস্থা থেকে আমৃত্যু থাইরয়েড হরমোনের প্রয়োজন। এ হরমোনের তারতম্যের জন্য শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, শরীর মোটা হওয়া, ক্ষয় হওয়া, মাসিকের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, হার্টের সমস্যাসহ চোখ ভয়ংকরভাবে বড় হয়ে যেতে পারে।
দেশে থাইরয়েড রোগের পরিস্থিতি সম্পর্কে চিকিৎসকরা বলেন, বাংলাদেশে সবধরনের থাইরয়েড সমস্যা একসঙ্গে হিসাব করলে, তা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি হবে। ভারতের অবস্থাও অনেকটা এমনই। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের প্রায় ২ শতাংশ ও পুরুষদের প্রায় ০.২ শতাংশ হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড ও হরমোনের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা) রোগে ভোগেন। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীদের মধ্যে ৩.৯ শতাংশ থেকে ৯.৪ শতাংশ হারে হাইপোথাইরয়েডিজম থাকতে পারে। আরও প্রায় ৭ ভাগ নারী ও পুরুষ সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েডিজমে ভোগেন। খুলনা বিভাগে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ৯২৫ জন নারীর মধ্যে ২০ দশমিক ৪৩ ভাগ থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন। নবজাতক শিশুদেরও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতিজনিত সমস্যা (কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম) হতে পারে। এর হার ১০ হাজার জীবিত নবজাতকের ক্ষেত্রে ২ থেকে ৮ জন। বাড়ন্ত শিশুরাও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতিতে ভুগতে পারে।
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারডেম হাসপাতালের ডিরেক্টর জেনারেল অধ্যাপক ডা. জাফর এ লতিফ।
আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. হাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. এস এম আশরাফুজ্জামান, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ হাসানাত, সহ-সভাপতি ডা. এম এ সামাদ, ইসি সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদুদ্দিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সম্পাদক ডা. কাজী আলী হাসান, বিজ্ঞান ও গবেষণা সম্পাদক ডা. নাজমুল কবীর কুরায়েশী, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম প্রমুখ।
সুত্র ঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর