মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামের মিন্টু মিয়ার ১১ মাসের মেয়ের জন্ম থেকে ঠোঁটকাটা। কিছুদিন আগে ভাসমান হাসপাতালে মেয়ের ঠোঁটে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন। এখন শিশুটির ঠোঁটে কোনো সমস্যা নেই। শিশুটির মতো আরও অনেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ।
হাসপাতালটি নোঙর করেছিল শিবালয়ের আরিচা নদীবন্দরের নেহালপুর এলাকায়। যমুনা নদীতে ‘জীবনতরী’ নামে ভাসমান একটি জলযান থেকে প্রায় চার মাস এলাকার বাসিন্দাদের স্বল্প খরচে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেসরকারি সংস্থা ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পরিচালনায় হাসপাতালটি যমুনা নদীর তীরে নোঙর করে ১৬ মার্চ থেকে হাসপাতালটি চিকিৎসা কার্যক্রম চালায়। জন্মগত ঠোঁটকাটা-তালুকাটা রোগীদের চিকিৎসা, প্লাস্টিক সার্জারি, নাক, কান, গলা ও চক্ষুরোগীদের চিকিৎসা ও বিশেষজ্ঞ সার্জন দিয়ে অস্ত্রোপচার এবং হাড়ভাঙাসহ পঙ্গুদের চিকিৎসা দেওয়া হয় এখানে। বর্তমানে হাসপাতালটি মুন্সিগঞ্জের মাওয়া হয়ে বরিশাল যাচ্ছে। সেখানে একইভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, শিবালয়সহ পাশের দৌলতপুর ও হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রোগীরা সেখানে যাচ্ছেন। তাঁরা ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করেন। হাসপাতালের ভেতরে অন্য হাসপাতালের মতো স্বল্প পরিসরে সবই আছে। অস্ত্রোপচারকক্ষ, পোস্ট অপারেটিভ কক্ষ, রোগীদের শয্যাসহ অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে হাসপাতালটিতে। চিকিৎসকেরা হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা সুবিধাবঞ্চিত রোগীরা চিকিৎসকদের সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাসমান হাসপাতালে প্রতিদিনই দেড় শতাধিক দরিদ্র নারী-পুরুষ ও শিশু দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসে। হাসপাতালটি ১২ শয্যার। চিকিৎসক তিনজন—একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ, একজন চোখের, একজন অর্থোপেডিকসের। চারজন নার্স, দুজন চিকিৎসকের সহকারী এবং দুজন কর্মকর্তাসহ মোট ৪০ জন জনবল রয়েছে হাসপাতালে। এখানে নিয়মিত এক্স-রে, রক্তসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে। হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে চক্ষুরোগের চিকিৎসা করা হয়। লেন্স সংযোজনের মাধ্যমে চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়। ভাসমান হাসপাতালে ফ্যাকো সার্জারিরও ব্যবস্থা আছে। পঙ্গু রোগীদের সহায়ক সামগ্রী প্রদান করা হয়।
কানের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন শিবালয়ের ছোট আনুলিয়া গ্রামের বৃদ্ধ আফতাব উদ্দিন (৭০)। তিনি বলেন, তাঁর বাঁ কান দিয়ে পানি পড়ে। এক আত্মীয়ের পরামর্শে তিনি এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। ইএনটি কক্ষে গিয়ে তিনি নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ তামিম হোসেনের কাছ থেকে চিকিৎসাসেবা নেন।
চিকিৎসক তামিম হোসেন বলেন, নাকের সঙ্গে কানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নাকের কোনো সমস্যা দেখা দিলে কানেও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। কোনো কোনো রোগীর কানে পর্দায় ছিদ্র দেখা যায়। মাইক্রো-সার্জারির মাধ্যমে কানের পর্দা জোড়া লাগানো হয়।
হাসপাতালের প্রশাসক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, চক্ষুরোগ, ইএনটি, অর্থোপেডিক ও ঠোঁটকাটা রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। শিবালয়ে ভাসমান হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে প্রায় চার হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সুত্র ঃ প্রথম আলো