ফলের রস উপকারী। কিন্তু তাজা ফল আরও বেশি উপকারী হতে পারে। ফলের রসে বেশি স্বাদ থাকলেও পুরো ফলে বেশি গুণ। এ জন্য পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বেশি করে ফল খেতে বলেন। ফল যে ডায়াবেটিস রোধের জন্য উপকারী, তা আগে থেকেই জানা ছিল। কিন্তু পুরো ফল আর তার রসের মধ্যে পার্থক্য আছে কি না, তা নিয়ে বছর দেড়েক আগে হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের একদল গবেষক অনুসন্ধান পরিচালনা করেন। তাঁরা দেখেন আপেল, আঙুর, ব্লুবেরি প্রভৃতি ফল বিশেষভাবে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি হারে কমাতে সাহায্য করে। সে তুলনায় ফলের রসে আশঙ্কা ততটা কমে না। এ পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে অনলাইন ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (২৯ অাগস্ট, ২০১৩) প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং রসের চেয়ে পুরো ফল খেলে বেশি উপকার।
১. ফলে আছে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ (মিনারেল), আঁশ ও কিছু ফাইটোকেমিক্যাল। এগুলো রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমায়। পাশাপাশি এসব উপাদান ক্যানসার, হৃদ্রোগ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফল থেকে শুধু রসটুকু বের করে নিলে এর আঁঁশ, কিছু ভিটামিন ও সেই সঙ্গে আরও কিছু উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। তখন তা বেশ কিছু উপকারিতা হারায়। তাই পুরো ফল খাওয়া বেশি ভালো।
২. ফলের রসের চেয়ে পুরো ফলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ২৩ থেকে ৫৪ শতাংশ বেশি থাকে। চিনির পরিমাণ অন্তত ৩৫ শতাংশ কম থাকে। তাই ফলের উপকারিতা বেশি।
৩. ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তার রসের চেয়ে কম। কোনো খাদ্যের শ্বেতসার-শর্করা কত দ্রুত রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়ায়, তার একটি পরিমাপ হলো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। যদিও চিনি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার সম্পর্ক নেই, কিন্তু আঁঁশসমৃদ্ধ ফল খেলে তা পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে ধীরে অতিক্রম করে, বিপরীতে ফলের রসের উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের কারণে তা বেশি দ্রুত শরীরে চলে যায়। তাই পুরো ফল খাওয়াই বেশি ভালো।
৪. ধরা যাক কমলা ও কমলার রসের কথা। কোনটা বেশি ভালো? কমলার ভেতরের নরম শাঁসে রয়েছে ফ্লেভনয়েড। এই ফ্লেভনয়েড হলো কমলার রঙিন উপাদান (পিগমেন্ট)। ফ্লেভনয়েড ও ভিটামিন-সি প্রায়ই একসঙ্গে কাজ করে এবং তাদের মধ্যে বিক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যের উপকার করে। কমলার রস বের করে নিলে সেই সঙ্গে ফ্লেভনয়েডও বহুলাংশে কমে যায়। ফলে উপকারিতা কমে।
৫. অবশ্য এর অর্থ এই নয় যে ফলের রসে একেবারে কোনো উপকারিতা নেই। সপ্তাহে একবার ফলের রস খেলে দুবার পুরো ফল খাওয়া ভালো।
সুত্র ঃ প্রথম আলো