- আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও তুলনামূলক বেড়েছে
- ধরন পাল্টে যাওয়ায় চিকিৎসা বিঘিœত
- জ্বর হলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ
- মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে ডেঙ্গু। রোগের প্রাদুর্ভাব এবার অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। একই সঙ্গে পাল্টে গেছে রোগের ধরন। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পরও রোগীর শরীরে থাকা জীবাণুর ধরন বুঝতে সময় লাগছে চিকিৎসকদের। ততক্ষণে রোগীর শরীরে থাকা ডেঙ্গুর জীবাণু দ্রুত আরেক রূপ ধারণ করছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই আঘাত হানছে রোগীর ব্রেইন, হার্ট ও লিভারে। দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে আক্রান্তকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। রোগের ধরন পাল্টে যাওয়ার কারণে চিকিৎসা দিতেও সমস্যায় হচ্ছে চিকিৎসকদের। ডেঙ্গুর জীবাণু আগের তুলনায় বেশ শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। জ¦র হওয়ার পর পরই শয্যাশায়ী হয়ে পড়ছে রোগী। কিছু বুঝে উঠার আগেই মৃত্যু ঘটছে অনেক রোগীর। এখন জ্বর হলে মানুষ যেমন প্রথমে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার ভয় পায়, তেমনি ডাক্তাররাও তা শনাক্ত করে চিকিৎসা করেন। কিন্তু যার ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে, তা ঠিক কোন টাইপের ডেঙ্গু তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, জ্বর হলে ডেঙ্গুর পরীক্ষার পাশাপাশি টাইপিংও করতে হবে। না হলে রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া যাবে না। আর ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। জ¦র হলেই কালক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। আর চিকিৎসকদের উচিত হবে ডেঙ্গু প্রতিরোধকল্পে সরকারের তৈরি জাতীয় গাইডলাইন অনুসরণ করে চিকিৎসা প্রদান করা।
প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। তবে আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের মৌসুম যেন সারা বছর। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ বছর রাজধানীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার দ্রুত বাড়ছে এবং আক্রান্তদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হওয়ার হিড়িক পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ঘণ্টায় চার জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি ১ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ১৮০ জন। মারা গেছেন ৩ জন। আর পাঁচ জনের মৃতদেহ ডেঙ্গু রোগী সন্দেহে রেখে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। চলতি বছরে মোট আক্রান্তের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৯ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ৪৫ জন, মে’তে ১৫৩ এবং জুনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৯৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আর ১ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১২১৬ জন। অর্থাৎ এই ৯ দিনে গড়ে দৈনিক ১৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বেসরকারী হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বর হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা। এই মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এটি সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমরা প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাচ্ছি। তবে বর্তমানে এ রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা উপযুক্ত চিকিৎসায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর সুস্থ হয়ে উঠছেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু জীবাণুর উৎস এখনও বন্ধ হয়নি। এ কারণে মৃত্যুর হার কমে গেলেও আক্রান্ত হওয়ার প্রকোপ কমছে না। ডেঙ্গুর উৎস বন্ধ না হলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। অন্য ভাইরাসজনিত রোগের মতো ডেঙ্গু রোগের সরাসরি কোন প্রতিষেধক নেই, টিকাও নেই। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়। অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল্লাহ আরও জানান, নগরীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছরের মতো এ বছরও হিমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা নাক ও দাঁত দিয়ে এবং কাঁশির সময় রক্তক্ষরণে ভুগে থাকে। আর আক্রান্তরা পিঠ, ঘাড়, মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা অনুভূত হওয়ার কথা বলে থাকে। তিনি বলেন, যেহেতু রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রকোপ দেখা দিয়েছে এবং মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে, সেহেতু জ্বর হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আর চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল ছাড়া কোন ওষুধ দেয়া ঠিক হবে না। রোগীকে বেশি মাত্রায় পানি বিশেষ করে শরবত খাওয়ানো যেতে যারে। দিনের বেলায় ঘুমানোর সময়ও মশারি ব্যবহার করা উচিত। বাসায় খোলা পাত্রে পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। এতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। বাসায় সর্বত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তিনি পরামর্শ দেন ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ।
ডেঙ্গুর ধরন পাল্টাচ্ছে ॥ দেশে ডেঙ্গুর ধরনে পরিবর্তন আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গুর গতি প্রকৃতি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালানো দরকার। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধকল্পে জাতীয় গাইডলাইন তৈরি করেছে সরকার। চিকিৎসা প্রদানের সময় গাইডলাইনটি অনুসরণ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই। ভেক্টর বর্ন ডিজিজ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা এসেন্ডের কান্ট্রি হেড অধ্যাপক ডাঃ বে-নজির আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ডেঙ্গু বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সব ডেঙ্গুই প্রাণঘাতী হয় না। চার ধরনের ডেঙ্গু (ডিইএনভি-১, ডিইএনভি-২, ডিইএনভি-৩ ও ডিইএনভি-৪) মধ্যে ঠিক কোন ধরনের ডেঙ্গুর প্রকোপ বাংলাদেশে বেশি, তা খতিয়ে দেখা জরুরী। এখন জ্বর হলে মানুষ যেমন প্রথমে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার ভয় পায়, তেমনি ডাক্তাররাও তা শনাক্ত করে চিকিৎসা করেন। কিন্তু যার ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে, তা ঠিক কোন টাইপের ডেঙ্গু, তা শনাক্ত করা হচ্ছে না। ফলে ডেঙ্গু পরীক্ষার পাশাপাশি টাইপিংও করতে হবে। না হলে রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া যাবে না।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ সাকিল আহমেদ বলেন, ডেঙ্গুর আঘাত হানার জায়গাগুলোতেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রোগীর ব্রেইন, হার্ট ও লিভারেও আঘাত হানছে ডেঙ্গুর জীবাণু। ফলে বুঝে উঠার আগেই মৃত্যু ঘটছে অনেক ডেঙ্গু রোগীর। তিনি বলেন, প্রেসার কমে যাওয়াটাই ডেঙ্গুর মূল সমস্যা। অনেক রোগীর প্রেসার কমতে কমতে এমন খারাপ অবস্থায় চলে যায়, যা পরিমাপ দেয়ার অবস্থায় থাকে না। ফলে রোগীর দুর্ঘটনা ঘটে। তাই জ¦র হলেই রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধকল্পে জাতীয় গাইডলাইন তৈরি করেছে সরকার। চিকিৎসা প্রদানের সময় চিকিৎসকদের ওই গাইডলাইনটি অনুসরণ করা দরকার। অনুসরণ না করলেই চিকিৎসার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে রোগীর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। চলতি বছরে প্রায় ১ হাজার ৮০০ চিকিৎসককে ওই জাতীয় গাইডলাইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানান ডাঃ সাকিল আহমেদ।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশসহ বিশে^র অনেক দেশ আজ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এই রোগ প্রতিরোধে জাতীয় গাইডলাইন তৈরি করেছে সরকার। নানামুখী সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ডেঙ্গুর বিষয়টি এখন মানুষ জানে। তবে এর যে গতি-প্রকৃতিতে পরিবর্তন হচ্ছে সে সম্পর্কে সচেতনতা নেই। অনেক চিকিৎসকেরও এ বিষয়ে ভাল ধারণা নেই। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে সচেতন ও সতর্ক থাকলে এবং জ¦র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সময়ক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে ডেঙ্গু থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ও বর্তমানে আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পরামর্শক অধ্যাপক ডাঃ মাহামুদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুর কারণে মায়োকার্ডিটিসে আক্রান্ত হলে তা খুবই বিপজ্জনক। অনেক চিকিৎসকের পক্ষে তা দ্রুত বুঝে ওঠা কঠিন। তাই এ বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। তিনি জানান, চীনে মায়োকার্ডিটিসে আক্রান্ত তিন হাজার মানুষের ওপর গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ১১ শতাংশ ডেঙ্গু থেকে মায়োকার্ডিটিসে আক্রান্ত হয়েছে। এটি আক্রান্তদের মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম।
জলবায়ুর প্রভাব ॥ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে গ্রীষ্মম-লীয় দেশগুলোতে এ রোগে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুহার প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে একদিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খরা, বরফ গলছে ও সুনামিসহ ঝড় হচ্ছে। ফলে বর্ষাকালের সময় বৃদ্ধি, অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে বহু মানুষ খোলামেলা স্থানে বসবাস করতে বাধ্য হয় এবং মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন!
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন কাজ করছে। সংস্থাটি দুটির মেয়র দক্ষিণের সাঈদ খোকন ও উত্তরের আতিকুল ইসলাম এরই মধ্যে এ নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। স্ব স্ব সংস্থার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক ও প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করেছেন। এ ছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর, মসজিদের ইমাম, বিভিন্ন সোসাইটির নেতারা, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করেছেন। মশা নিধনে শুরু করেছেন বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম।
সচেতন থাকলে আতঙ্কের কিছু নেই ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। যার প্রভাবে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও বেড়েছে। কখনও খরা, আবার কখনও বা অতিবৃষ্টির ফলে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা অনেক কম। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্য রাজধানীতে ডেঙ্গুর এ ধরনের প্রকোপ এক ধরনের বাস্তবতা। প্রত্যেক নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। জ¦র হলে সাধারণ জ¦র মনে না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে হবে। সকল হাসপাতালকেই এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। জ¦র নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। সচেতন থাকলে আতঙ্কের কিছু নেই। আর ডেঙ্গু প্রতিরোধকল্পে সরকারীভাবে তৈরিকৃত জাতীয় গাইড মেনে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ দেন মহাপরিচালক।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে ডেঙ্গু মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করতে হবে। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে অধিক সচেতন হতে হবে। তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতর বর্ষা মৌসুমের আগে গত মার্চ মাসে রাজধানীর ১০০টি ওয়ার্ডে মশক জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে জমে থাকা পানি, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বালতি, অব্যবহৃত টায়ার, প্লাস্টিক ড্রাম, পানির ট্যাংক, পানির মিটারের গর্ত, চিত্রাঙ্কনের জন্য ব্যবহৃত পাত্র এডিস মশার উৎকৃষ্ট প্রজনন স্থল। বেখেয়ালে এ সব পাত্রে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। নগরবাসীর যদি নিজ বাড়ি ও বাসার সামনে এ ধরনের পাত্রে পানি জমতে না দেয় তবে এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ হবে।
গত ১৯ বছরে আক্রান্ত ও মৃত্যু ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০০ সালে ৫৫৫১ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৯৩ জন, ২০০১ সালে ২৪৩২ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৪৪ জন, ২০০২ সালে ৬২৩২ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৫৮ জন, ২০০৩ সালে ৪৮৬ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১০ জন, ২০০৪ সালে ৩৪৩৪ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১৩ জন, ২০০৫ সালে আক্রান্ত ১০৪৮ জন ও মৃত্যু ৪ জন, ২০০৬ সালে আক্রান্ত ২২০০ জন ও মৃত্যু ঘটে ১১ জনের। এভাবে ২০০৭ সালে ৪৬৬ জন, ২০০৮ সালে ১১৫৩ জন, ২০০৯ সালে ৪৭৪ জন এবং ২০১০ সালে ৪০৯ আক্রান্ত হলেও ওই চারটি বছরে কেউ মারা যায়নি। আর ২০১১ সালে ১৩৫৯ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৬ জন, ২০১২ সালে ৬৭১ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১ জন, ২০১৩ সালে ১৭৫৯ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ২ জন, ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন আক্রান্ত, ২০১৫ সালে ৩১৬২ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৬ জন, ২০১৬ সালে ৬০৬০ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১৪ জন, ২০১৭ সালে আক্রান্ত ২৭৬৯ ও মৃত্যু ৮ জন এবং ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জন আক্রান্তের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু ঘটে।
বিশে^ ডেঙ্গু রোগী ॥ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশে^র অনেক দেশেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫০ শতাংশ সাধারণ ও মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমানে প্রতি বছর মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গু ( হেমোরেজিক) জ্বরে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি মিনিটেই বিশ্বের কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই শিশু। আক্রান্তদের মধ্যে বছরে ২২ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে মালয়েশিয়াতে ডেঙ্গু জ্বরে ৪৬ হাজার আক্রান্ত ও ৭৪ জনের মৃত্যু, ফিলিপিন্সে ৭২ হাজার আক্রান্ত ও ৩০৩ জনের মৃত্যু, সিঙ্গাপুরে ৩ হাজার ২৩৩ আক্রান্ত, ভিয়েতনামে ৬০ হাজার আক্রান্ত ও চারজনের মৃত্যু, প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৬ হাজার ৮০৭ জন আক্রান্ত ও ৭ জনের মৃত্যু, মিয়ানমারে ৪ হাজার আক্রান্ত ও ১৪ জনের মৃত্যু এবং থাইল্যান্ডে ২৬ হাজার আক্রান্ত ও ৪১ জনের মৃত্যু হয়।
সূত্রঃ জনকণ্ঠ