সরকারী হাসপাতালে রোগীর পথ্যের বরাদ্দের অর্থ বাড়ানো সময়ের দাবি

সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসারত একজন রোগীর পথ্যের জন্য দৈনিক বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও কথাটি সত্য। এই সামান্য অর্থে প্রত্যেক রোগীকে সকালে ও সন্ধ্যায় নাস্তা এবং দুপুরে ও রাতে খাবার দিতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। আবার বিশেষায়িত রোগীর জন্য থাকে আলাদা ব্যবস্থা। এর জন্য কোন বিশেষ বরাদ্দ নেই। তবে বিশেষ বিশেষ দিনে যেমন- স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসসহ দুই ঈদে রোগীদের জন্য উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এর জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকে প্রতিদিনের জন্য দু’শ’ টাকা। অনস্বীকার্য যে, রোগীর আরোগ্যের জন্য শুধু ওষুধ হলেই চলে না, এর পাশাপাশি চাই বিশেষ পথ্য, যা উচ্চমাত্রার প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজে সমৃদ্ধ। বর্তমানে নিত্যপণ্যের দুর্মূল্যের বাজারে দৈনিক মাত্র ১২৫ টাকায় পুষ্টিমানসমৃদ্ধ খাদ্য কেনা ও সরবরাহ করা শুধু দুঃসাধ্য নয়, প্রায় অসম্ভব। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, পঙ্গু হাসপাতালসহ দেশের সব সরকারী হাসপাতালের জন্য একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকে। অনেক নামী-দামী হাসপাতালে বেডের তুলনায় অনেক বেশি রোগী ভর্তি হয় এবং চিকিৎসাধীন থাকে- এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না। অথচ রোগীর পথ্য বাবদ দৈনিক বরাদ্দ বাড়েনি গত ছয় বছর ধরে। ২০১৩ সালে সর্বশেষ রোগী প্রতি দৈনিক বরাদ্দ ৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ১২৫ টাকা। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতিসহ বেড়েছে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম। এই বরাদ্দে রোগীর পথ্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। বাধ্য হয়ে তারা এই বরাদ্দ বাড়িয়ে অন্তত দু’ শ’ টাকা করার জন্য দাবি জানিয়েছেন সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি। নিতান্ত মানবিক বিবেচনায় এই বরাদ্দ বাড়ানো বাঞ্ছনীয় বৈকি।

স্বীকার করতে হবে যে, দেশের সরকারী হাসপাতালগুলোতে অল্প-বিস্তর চিকিৎসা সুবিধা মেলে। বর্তমান সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে জনবল পর্যাপ্ত না হোক কমবেশি বাড়ানো হয়েছে। ওষুধ-পথ্যসহ চিকিৎসা উপকরণের সরবরাহও আশানুরূপ। এক্স-রেসহ রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ-সুবিধাও আছে। আছে ডাক্তার, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয়, এমনকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাদের বেতন-ভাতাও বেড়েছে অনেক। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এতকিছুর পরও সরকারী হাসপাতালের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ তথা রোগীদের অভিযোগের অন্ত নেই। এর মধ্যে অন্যতম হলো পথ্য তথা খাবার। সরকারী হাসপাতালে প্রায় বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যায় বিধায় অপেক্ষাকৃত মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও গরিব মানুষ স্বভাবতই ভিড় জমিয়ে থাকেন সেখানে। সারাদেশের গ্রামগঞ্জ থেকেও রোগীরা এসে ভিড় জমান রাজধানীতে, যারা একটু জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হন। এ কারণেই রাজধানীর হাসপাতালসহ বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে রোগীদের প্রচন্ড ভিড় পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। সেই অনুপাতে থাকে না রোগীর শয্যা, ওষুধপত্র, রোগ নির্ণয়সহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা, সর্বোপরি পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, পথ্য ইত্যাদি। অনেক সরকারী হাসপাতালেই শয্যার অভাবে রোগীদের রাখা হয় মেঝে ও বারান্দায় গাদাগাদি করে। সে অবস্থায় রোগী প্রতি দৈনিক পথ্যের জন্য বরাদ্দের অর্থ বাড়ানো এখন সময়ের যৌক্তিক দাবি অবশ্যই।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *