‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ ইউএনডিপি’র এমন অঙ্গীকারকে সামনে রেখে এটুআই ইনোভেশন ল্যাব এর তত্ত্বাবধানে উদ্ভাবিত স্বল্পমূল্যের দু’টি অ্যাম্বুলেন্স রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প থেকে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী পরিবহনের জন্য রিসার্চ ট্রেনিং এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আরটিএম) ইন্টারন্যাশনাল এর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ২৭ জুন, ২০১৯ কক্সবাজার সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে আয়োজিত হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জনাব মোহাম্মদ আবুল কালাম এনডিসি, এটুআই এর পক্ষ থেকে এটুআই এর পরিচালক (যুগ্ম সচিব) জনাব মো: আব্দুস সবুর মন্ডল, ইউএনএফপি এর চীফ অফ হেলথ্ সত্যনারায়ণ ডোরাস্বামি এবং ইউএনএফপি এর সহযোগী সংস্থা আরটিএমআই এর নির্বাহী পরিচালক জনাব সায়েদ জগলুল পাশা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার এর জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ কামাল হোসেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জনাব মোহাম্মদ আবুল কালাম এনডিসি, বলেন, এই স্বল্পমূল্যের অ্যাম্বুলেন্সটি শুধুমাত্র গর্ভবতী নারী কিংবা রোগী পরিবহনের ক্ষেত্রেই সাহায্য করবে না, বরং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প-এর রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অনেক অর্থ ব্যয়ও হ্রাস করবে।
কক্সবাজার এর জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ কামাল হোসেন বলেন, “প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করার জন্য আমাদের একটি জেলা ইনোভেশন টীম রয়েছে এবং এর মাধ্যমে আমরা জনগণের সুযোগ সুবিধাগুলোকে আরো সহজ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এই অ্যাম্বুলেন্স কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত করেছে।”
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ইউএসএইড ও ইউএনডিপি এর সহায়তায় পরিচালিত এটুআই-ইনোভেশন ল্যাব কর্তৃক উদ্ভাবিত এই স্বল্পমূল্যের অ্যাম্বুলেন্সটি সম্পূর্ণ স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সটি প্রাথমিকভাবে উদ্ভাবন করেন যশোরের মিজানুর রহমান। এই অ্যাম্বুলেন্সে একজন রোগী এবং দুই’জন যাত্রী বহন করা সম্ভব এবং এটি প্রতি লিটারে ২৫ কি.মি. পথ পাড়ি দিতে সক্ষম। অ্যাম্বুলেন্সটি তৈরিতে সর্বনিম্ন খরচ পড়ছে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, তবে অ্যাম্বুলেন্সটিকে বিশেষায়িত করার ভিত্তিতে এর খরচ কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। স্বল্পমূল্যের এই অ্যাম্বুলেন্সটি এটুআই ইনোভেশন ফান্ড এর ৯ম রাউন্ডে পুরস্কার প্রাপ্ত হয়। উদ্ভাবিত অ্যাম্বুলেন্সটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া যায় (যেমন- প্রাইমারী ও সেকেন্ডারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র) অথবা উন্নত এ্যাম্বুলেন্স সেবা পাওয়া যায় এমন স্থানে রোগী আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহার করা যাবে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপি) রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহযোগিতার জন্য এ দু’টি অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করেছে এবং এর সহযোগি সংস্থা আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল তা পরিচালনা করবে।
উল্লেখ্য, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘এটুআই’ দেশব্যাপী নানামুখী উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় বিভিন্ন নাগরিক সেবা সহজিকরণ ও বিদ্যমান নাগরিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ইনোভেশন ফান্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রস্তাবনাকে ফান্ড প্রদান করা হয়েছে। এটুআই ইনোভেশন ফান্ড (এআইএফ) পদ্ধতিগতভাবে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রদান করা হয়। একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ প্যানেল কর্তৃক নির্বাচিত/সুপারিশকৃত প্রস্তাবসমূহকেই শুধুমাত্র এই ফান্ড প্রদানের জন্য বিবেচনা করা হয়। ইতোমধ্যে, এটুআই ইনোভেশন ফান্ডের ১০টি রাউন্ডের মাধ্যমে মোট ২০৯টি প্রকল্পকে পুরস্কৃত করা হয়েছে, প্রকল্পগুলো বর্তমানে উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।
হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ইউএনডিপি এর হেড অব কমিউনিকেশনস জনাব মোঃ আবদুল কাইয়ুম, ইউএনএফপি এর হেড অব সাব অফিস কক্সবাজার, রোজলিডা রাফায়েল এবং ইউএনএফপি এর প্রোগ্রাম এনালিস্ট এসআরএইছআর শেইখ মোহাম্মদ জাকারিয়া এবং বিভিন্ন বিদেশি ও দেশি সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।