আষাঢ়ের বৃষ্টি আর সেই সঙ্গে একরাশ রোগবালাই এই নিয়ে আসে বর্ষা মৌসুম। জ্যৈষ্ঠের প্রখর তাপদাহের পর প্রকৃতিতে প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয় বর্ষাকাল। দিন-রাত কিংবা হঠাৎ হঠাৎ আকাশ কালো করে ঝরে পড়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। আর এই বৃষ্টিকে সঙ্গী করেই চলতে হয় কর্মব্যস্ত মানুষদের।তবে বৃষ্টি বলে তো আর ঘরে বসে থাকলে চলবে না। কর্মজীবী বা শিক্ষার্থী সবাইকেই বাইরে বের হতে হয় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। বর্ষার এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় জামা-জুতা থেকে শুরু করে খাবার-দাবার সব কিছুতেই কেমন যেন একটা ড্যাম ভাব চলে আসে। আর এই সুযোগে শরীরে বাসা বাঁধতে চায় নানা অসুখ-বিসুখ। সর্দি, কাশি, জ্বর, টাইফয়েড, কলেরা, হজমের সমস্যা, জন্ডিস, ফুড পয়জনসের রোগগুলো খুব দ্রুত দেখা দেয়। তাই এ সময় ঘরদোর থেকে শুরু করে নিজের খাওয়া-দাওয়ারের প্রতি বাড়তি সচেতনতা মেনে চলা জরুরি।
প্রচুর পানি পান করুন
গরমকালে ঘাম বেশি হয় বলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়। তাই প্রচুর পানি পান করতে হয়। কিন্তু বর্ষাকালেও কেন বেশি পানি পান করতে হবে? উত্তরটা খুব সহজ। গরমকালের মতো বর্ষা মৌসুমেও শরীরে প্রচুর ঘাম হয়। কিন্তু এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় বাতাসে ভেজা ভাব থাকে। এতে শরীর থেকে ঘাম বেরিয়ে যায় না। কিন্তু শরীরে এক ধরনের ভেজা ভাব বজায় থাকে। তাই এ সময় সুস্থ থাকতে বেশি করে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে খেতে পারেন শরবত, তাজা ফলের জুস, লেবুর পানি। ঘরে কিংবা বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন সবসময় পানির বোতল সঙ্গে নিন। বাইরের খোলা পানি কখনও খাবেন না। এছাড়া অল্প গরম আদা-চা এ সময় বেশ কার্যকর। এটি শরীরের পানিশূন্যতা রোধে সাহায্য করে।
সুষম খাবার খান
বর্ষায় সুস্থ থাকার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে সুষম বা ব্যালেন্স ডায়েট গ্রহণ করা। কেননা এ সময় শরীরের হজম ক্ষমতা বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই এ সময় খাবার-দাবারের ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। টাটকা ও ফ্রেশ খাবার খেতে হবে। ক্ষুধা না লাগলে অসময়ে খাবেন না। খাবার জন্য অবশ্যই টাইম মেইনটেইন করুন। অসময় খেলে হজমে সমস্যা দেখা দেবে। আর তা থেকে আপনি আক্রান্ত হবেন নানা রোগ-বালাইয়ে। খাবার রান্নার সময় হলুদ, মরিচ, ধনিয়া গুঁড়ো ব্যবহার করুন। এসব মশলা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পরিষ্কার এবং ফ্রেশ খাবার খান
বর্সায় বাসি খাবার একদম খাওয়া ঠিক নয়। কেননা এমনিতেই বাসি খাবারে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, তার ওপর বর্ষাকালে এর প্রভাব আরও বেড়ে যায়। অনেকে মনে করেন খাবার ফ্রিজে থাকলে ভালো থাকে। তবে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেই খাবারটা আদৌ ভালো থাকে কি-না তা খাবার আগে একবার ভেবে দেখুন। এ সময় মাছ-মাংসের চেয়ে বরং সবজি ও ফলমূল বেশি করে খান। আমাদের দেশে এ সময় বিভিন্ন জাতের প্রচুর দেশি ফল পাওয়া যায়। এ সময় ফল রোগ-বালাই থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে। খাবার আগে যে কোনো সবজি ভালো করে ধুয়ে তারপর রান্না করুন। চেষ্টা করুন প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন রান্না করে খেতে। বাসি খাবার একদম এড়িয়ে চলুন।
রেস্তরাঁর খাবার ‘না’
রেস্তরাঁর খাবারে সবসময় তেল মশলা একটু বেশি থাকে। এ সময় খাবার সাধারণত একনিতেই একটু দেরিতে হজম হয়। আর বর্ষাকালে হজম শক্তি কমে যায় বলে রেস্তরাঁর খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। শুধু রেস্তরাঁর নয়, রাস্তার খাবার যেমন চটপটি, মুড়িমাখা, আখের শরবত, আইসক্রিম এসব মুখরোচক খাবার না খাওয়াই ভালো।
এসব খাবার হাইজিনিক না হওয়ায় ব্যাকটেরিয়া দ্রুত শরীরে আক্রমণ করে আপনাকে অসুস্থ করে তুলবে। রাস্তায় কেটে রাখা ফল খাবেন না। এতে ফুড পয়জনিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু এখন রমজান মাস চলছে তাই বাইরের খাবার, কেনা ইফতারি আরও খাওয়া উচিত নয়। ঘরে তৈরি ইফতার ও সেহরি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম।
চোখের যত্ন নিন
বর্ষাকালে চোখওঠা, চোখ জ্বালাপোড়া, পানি পড়ার মতো অস্বস্তি ও বিরক্তির কিছু সাধারণ রোগে আমরা কম-বেশি সবাই আক্রান্ত হই। সে ক্ষেত্রে আপনাকে বাড়তি কিছু সাবধানতা অবলম্বল করতে হবে। যেমন চোখে বা মুখে হাত দেয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে।