>> সর্বস্ব বিক্রি করেও দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা ষ প্রযুক্তিগত দুর্বলতা দূর ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা উন্নত করার তাগিদ
>>চিকিৎসকদের মানসিকতা পরিবর্তনের পরামর্শ
নিখিল মানখিন ॥ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর রেকর্ড সংখ্যক রোগী বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। দেশে চিকিৎসাসেবার ওপর আস্থাহীনতা, ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা, প্রযুক্তিগত দুর্বলতা এবং চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতাকেই এজন্য দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশে সব ধরনের রোগের চিকিৎসা সুবিধা থাকলেও চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রটি পুরোপুরি রোগীবান্ধব হয়ে ওঠেনি। চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত লোকজন এবং রোগীদের মধ্যে অনেক মানসিক দূরত্ব¡ বিরাজ করে। দেশী চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতি রোগীদের আস্থার ঘাটতি রয়েছে। তাই বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করাটাকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নেন অনেক বাংলাদেশী রোগী। শুধু বিত্তশালী নন, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক রোগীই নিজেদের সর্বস্ব বিক্রি করে দিয়ে হলেও বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে নিজেদের নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা খুঁজে পেতে চান। এতে ব্যয় হচ্ছে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা। বিদেশে চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় চিকিৎসা সেক্টর নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, বাড়ছে অঘোষিত অনাস্থা। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হলে প্রযুক্তিগত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। উন্নত করতে হবে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা। চিকিৎসকদের মানসিকতা পরিবর্তন করে তাদের রোগীবান্ধব হয়ে উঠতে হবে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা রোগে আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসা নিতে পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশে। প্রতিবছর রেকর্ড সংখ্যক রোগী যাচ্ছেন ভারতে। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াতেও দেশের উল্লেখযোগ্য রোগী যান। স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব কমার্শিয়াল ইন্টেলিজেন্স এ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস (ডিজিসিআই-এ্যান্ডএস) একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। এটি ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রকাশ করা হয়। সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারতে চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি ছিলেন বাংলাদেশী। ওই অর্থ বছরটিতে ভারতে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন মোট প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার জন বিদেশী। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই গেছেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৭০ হাজার জন। তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫৮ হাজার ৩৬০ বাংলাদেশী নাগরিককে মেডিক্যাল ভিসা দিয়েছে ভারত। ২০১৮ সালেও পাড়ি জমান প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার বাংলাদেশী রোগী। এছাড়া পর্যটন ভিসায় ভারতে যাওয়া বাংলাদেশীদের অধিকাংশেরই লক্ষ্য থাকে চিকিৎসা নেয়া। যেসব রোগী ভারতে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই অর্থোপেডিক্স, ক্যান্সার, কার্ডিওলজি ও নিউরো সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত। ২০১৭ সালে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী নাগরিককে ভারতে যাওয়ার মেডিক্যাল ভিসা দেয়া হয়। ভারতের পর্যটকদের কাছ থেকে আসা চিকিৎসা সেবার ৩৫ শতাংশই বাংলাদেশ নিয়েছে। বিদেশীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে ভারতের মোট আয়ের ৫০ শতাংশ আসে শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকে।
বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক রিপোর্টে বলা হয়, প্রতিবছর বাংলাদেশীরা বিদেশে চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রায় ২.০৪ বিলিয়ন টাকা খরচ করে থাকে। এ অর্থ বাংলাদেশের মোট আয়ের ১.৯৪ শতাংশ। একই চিকিৎসা বাংলাদেশে করতে যে ব্যয় হয়ে থাকে, তা করতে ভারতে খরচ প্রায় দ্বিগুণ। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে ৩ থেকে ১০ গুণ বেশি। তবে হাসপাতালের বিল, কেবিন খরচসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচাপাতি হিসাব করলে খরচ প্রায় কাছাকাছি হয়ে আসে। যার কারণে স্থানীয় হাসপাতালগুলোর প্রতি অনীহা বেড়েই চলেছে দিন দিন।
বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার কারণসমূহ ॥ হার্ট এ্যাটাকের শিকার হওয়ার পর তাৎক্ষণিক এনজিওগ্রাম করে হার্টে একটি রিং বসানো হয়েছে রাজধানীর ধানম-িবাসী বসন্ত ঘোষের (৩৯)। নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় থাকেন। ইতোমধ্যে ঢাকার কয়েকজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে ফলোআপ করিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন চিকিৎসকের নানা মন্তব্য রয়েছে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভারতে যাবেন। সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে চান বসন্ত ঘোষ। ৩৫ বছর বয়সী সুরাইয়া বেগম টিউমারে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকার এক হাসপাতালে। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার বাম দিকের ডিম্বাশয় সরিয়ে ফেলতে হয়। তার কয়েক বছর পর ডায়েবেটিস ও অন্য কিছু শারীরিক সমস্যার জন্য তিনি যখন কলকাতায় যান। সেখানকার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা তাকে জানান যে, আগে তাকে অস্ত্রোপচারের যে ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ছিল। ডিম্বাশয় না কেটে শুধুমাত্র ভাল ওষুধ খেলেই সেরে উঠতে পারতেন তিনি। এক নবদম্পতি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বাংলাদেশের একটি সরকারী হাসপাতালে যান পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করতে। সেখানকার দায়িত্বরত ডাক্তার দম্পতিকে জানান যে, তাড়াতাড়ি বাচ্চা না নিলে মহিলার ডিম্বাশয়ের সিস্টে ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে। এ খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এই নব দম্পতি। ডাক্তার তাদের অতি দ্রুত বাচ্চা নিয়ে মহিলার ডিম্বাশয় স্থায়ীভাবে কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। তখন তারা আতঙ্কিত হয়ে সেসব রিপোর্ট নিয়ে অন্য গাইনি ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করলে দেখা যায় সেসব আতঙ্কের কোনই কারণ নেই, তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। দুই ডাক্তারের কাছে দুই ধরনের কথা শুনে এ দম্পতি দ্বিধায় ভুগতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তারা ভারতে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে জানতে পারেন যে, মহিলার এমন কোন সমস্যা নেই। চোখের সমস্যা নিয়ে বাড্ডাবাসী আবুল কাশেম (৪৫) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে গেলে নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর তার সিরিয়াল আসে। চেয়ারে বসার পর তাকে দেখতে শুরু করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। তাকে দেখা শেষ হওয়ার আগেই কক্ষে এক লোক প্রবেশ করেন। তার সঙ্গে লম্বা আলাপ করতে থাকেন ওই চিকিৎসক। অনেকক্ষণ পর চিকিৎসক আবার জানতে চান তার (আবুল কাশেম) কী হয়েছে। পুনরায় ব্যাখ্যা করতে শুরু করেন রোগী। কিন্তু রোগীর দিকে মন নেই চিকিৎসকের। আগত লোকটির সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ করেই চলেছেন তিনি। এভাবেই প্রেসক্রিপশনটি তুলে দেয়া হয় আবুল কাশেমের হাতে। বাংলাদেশের অধিকাংশ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়া রোগীদের এমন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় প্রতিনিয়ত। তাদের অনেকের দৃষ্টিতে জীবন নিয়ে জুয়া খেলার মতোই বিষয় দেশের ডাক্তারদের পরামর্শ নেয়া। আর সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মেডিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টের উপর ভরসা রাখতে পারেন না রোগীরা। এভাবে বিদেশে চিকিৎসাগ্রহণকারীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবার ওপর তাদের আস্থা নেই। এদেশের ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আর চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা বেশ লক্ষ্যণীয়। চিকিৎসক ও নার্সদের আচরণ রোগীবান্ধব নয়। এদেশে ক্যান্সার, নিউরো, লিভারসহ কিছু জটিল অসংক্রামক রোগের পূর্ণাঙ্গ বা চূড়ান্ত পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাসেবা নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোগীর সর্বোত্তম সেবা ও নিরাপত্তা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার প্রধান কাজ। তবে বাংলাদেশের অনেক হাসপাতালে রোগীদের সেবার চেয়ে ভোগান্তিই পোহাতে হয় বেশি। প্রয়োজন না থাকলেও দীর্ঘ সময় রাখা হয় আইসিইউতে। এর ওপর লাইসেন্সবিহীন নামসর্বস্ব হাসপাতালে অপচিকিৎসা তো রয়েছেই। হৃদরোগের রোগীদের হার্টের রিং পরাতে চলে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মন কষাকষি। কিডনি, লিভার প্রতিস্থাপনে রয়েছে নানা জটিলতা। সরকারী হাসপাতালে শয্যা সঙ্কট, বেসরকারী হাসপাতালের লম্বা সিরিয়াল এবং অব্যবস্থাপনা রোগীদের বিদেশমুখী হতে বাধ্য করে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ॥ বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, দেশের সর্বত্র প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার অবকাঠামো বেশ মজবুত। কিন্তু দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রযুক্তিগত দিক এখনও সর্বজনীনভাবে আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠতে পারেনি। স্বাস্থ্য সেক্টরের অবকাঠামো শক্তিশালী হলেও আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নেই বললেই চলে। মেডিক্যাল ট্যুরিজম বলতে বোঝায়, যখন কেউ চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যজনিত কারণে এক দেশ থেকে অন্যদেশে বা একই দেশের একস্থান থেকে অন্যস্থানে যান এবং স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বা রোগমুক্ত থাকতে চান। বিদেশে চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়ার কারণসমূহ উল্লেখ করতে গিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল্লাহ আল সাফী মজুমদার জনকণ্ঠকে জানান, তথ্য বিভ্রাটের শিকার হয়ে অনেকে বিদেশে যান। ধনাঢ্য পরিবারের সদস্যরা বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করে আত্মতৃপ্তি পেতেই বিদেশে গিয়ে থাকেন। অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কেউ কেউ দেশীয় চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর আস্থা রাখতে পারেন না। তাদের অনেকে দেশের প্রথম শ্রেণীর সব হাসপাতালের খোঁজ খবর নেন না। আর অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা বাধ্য হয়েই বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। দেশে এখনও কিছু সংখ্যক জটিল রোগের সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। লিভার সংযোজন ও কার্ডিয়াক হার্ট ট্রান্সপ্লান্টেশন এর ব্যবস্থা নেই। এমন অবস্থায় রোগীকে বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
বিদেশে যাওয়ার পেছনে দেশীয় চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত দুর্বলতাকে দায়ী করলেন ডক্টর ফর হেলথ এ্যান্ড এনভায়রন্টমেন্টের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ রশিদী-ই মাহবুব। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশীরা মূলত দু’টি কারণে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। এক শ্রেণীর মানুষ বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন। আর দেশে চিকিৎসা গ্রহণের পরেও শারীরিক অবস্থার উন্নতি না ঘটলে ওই রোগী বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করে থাকেন। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের অবকাঠামো অনেক শক্তিশালী। কিন্তু এখনও দেশের সর্বত্র বেশকিছু জটিল রোগের চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা নেই। শুধু তাই নয়, কিছু জটিল রোগের চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়ে গেছে। কয়েক মাস আগে দেশে শুরু হয়েছে বোনমেরু প্রতিস্থাপন কার্যক্রম। তাও আবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রিক। পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি অপারেশন সম্পন্ন হলেও দেশের কোন হাসপাতালেই স্থায়ীভাবে লিভার সংযোজন কার্যক্রম শুরু হয়নি। প্রাথমিক চিকিৎসা নয়, জটিল রোগের চিকিৎসা করানোর জন্যেই মানুষ এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি জমান বলে অধ্যাপক ডাঃ রশিদী-ই মাহবুব মনে করেন।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রে এই দেশে চিকিৎসা সুবিধা থাকলেও শুধুমাত্র হাসপাতাল ব্যবস্থানার কারণে রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। ডাক্তারসহ চিকিৎসা কাজে জড়িত ব্যক্তিদেরও মানসিকতা রোগীবান্ধব নয়। একজন রোগী যখন বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন তখনই এই পার্থক্যগুলো তার কাছে স্পষ্ট হয়। তিনি এসব বিষয় আত্মীয় পরিজন বা কাছে লোকদের কাছে প্রচার করতে থাকেন। বিদেশে যাওয়ার জন্য অন্যরাও তখন উদ্বুদ্ধ হন। যখনই মানুষ দেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাড়ি জমান, তখনই মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই ব্যয়িত অর্থ বৈধভাবে খরচ হলেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি বড় অংশ চলে যায়। পাশাপাশি অবৈধভাবে অনেকে খরচ মেটানোর জন্য অর্থ বহন করেন। গবেষণাকালে দেখা গেছে, সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষ চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে যান। এই সামর্থের মধ্যে তিনটি উপাদান রয়েছে- আর্থিক সঙ্গতি, লোকবলের সঙ্গতি, যোগাযোগের সঙ্গতি। মূলত আর্থিক সঙ্গতির ওপর নির্ভর করে মানুষ চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাবেন কিনা। চিকিৎসার সময়ে রোগীর সঙ্গে এটেন্ডেন্ট নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা প্রসেসিংও অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন তাতে সরাসরি যোগাযোগ কিংবা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব আগে চিকিৎসা নিয়েছেন অথবা এখনও ওই দেশে অবস্থান করছেন- সেটিও মেডিক্যাল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে ওই রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট হাসপাতালকে নির্বাচন করা অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে একটি হাসপাতাল উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ভারতের নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা খ্যাতনামা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবী প্রসাদ শেঠী বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবার মান প্রায় একই। কোন পার্থক্য দেখি না। তারপরও কেন বাংলাদেশের রোগীরা ভারতমুখী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতে একই ধরনের হাসপাতাল অনেক রয়েছে, অনেক বিকল্প রয়েছে, রোগীরা সে বিকল্প খোঁজে। আপনাদের এখানে অনেক সুযোগ নেই, সে কারণে যাচ্ছে। তিনি সব চিকিৎসককে মানবিক দিক বিবেচনা করে সেবা দেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, ভাল চিকিৎসার জন্য ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়া বাংলাদেশী মানুষের সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে। আমি এ দেশে এসেছি একটি মিশন নিয়ে, সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে বিদেশ রোগী যাওয়া বন্ধ করা। আমি চাই না বাংলাদেশীরা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাক। এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ফলে এ প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
– Janakantha