কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশন প্ল্যানে কমিউনিটি ক্লিনিক কেন্দ্রিক বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কার্যক্রমসমূহের মধ্যে রয়েছে জনবল বৃদ্ধি, নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ ও জরাজীর্ণ সিসি মেরামত। জনবল স্থায়ীকরণ ও নতুন নিয়োগ, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে হেলথ আউটকাম পরিমাপ, মাঠপর্যায়ে কার্যকর মনিটরিং ও সুপারভিশন জোরদারকরণ করা হবে। আর জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, কমিউনিটি ক্লিনিকের টেকসই প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। আর দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিকে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য ‘স্বাভাবিক ডেলিভারি’ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছে সরকার। বর্তমানে সীমিত সংখ্যক কমিউনিটি ক্লিনিকে এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। নির্মাণ করা হবে নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন। বিদ্যুত সংযোগ নেই এমন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ইতোমধ্যে সোলার বিতরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে নতুন মডেলে তিন কক্ষবিশিষ্ট (স্বাভাবিক প্রসব কক্ষসহ) কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত হচ্ছে। পরবর্তীতে সকল ক্লিনিক নতুন মডেল অনুযায়ী নির্মিত হবে।
কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার লক্ষ্যে গঠিত কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ট্রাস্টের কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান। সভায় ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত এমপি, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব, সাধারণ সম্পাদক নিখিল মানখিন, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সদস্য শিশির মোড়ল, সাংগঠনিক সম্পাদক সেবিকা দেবনাথ প্রমুখ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত সচিব ডাঃ মোঃ ইউনূস আলী প্রামাণিক।
কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মকা- আরও গতিশীল ও মানসম্মত করে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রকল্প। ক্লিনিকের সুফল ভোগ করছে দেশের সাধারণ মানুষ। বাড়ির পাশেই বিনামূল্যে মিলছে স্বাস্থ্যসেবা। কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্যসেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম যা বর্তমান সরকারের সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, দেশে-বিদেশে নন্দিত। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগণ কাছাকাছি কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার-পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবা পাচ্ছেন। এটি জনগণ ও সরকারের যৌথ উদোগে বাস্তবায়িত একটি কার্যক্রম। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম আরও গতিশীল, মানসম্মত ও স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘ কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট’ গঠন করেছে সরকার।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিকার বিষয়টি তুলে ধরে অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত বলেন, দেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগকে আরও বেগবান করতে কমিউনিটি ক্লিনিককে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘শেখ হাসিনার অবদান, কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ’ সেøাগানটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্র্যান্ডিং কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যমান কিছু সমস্যা সমাধানে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় সিবিএইচসি অপারেশন প্ল্যানে কমিউনিটি ক্লিনিক কেন্দ্রিক বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ট্রাস্টের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ মোঃ ইউনূস আলী প্রামাণিক বলেন, সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন, বেসরকারী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় দেশের গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর উদ্দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। সমাপ্ত প্রকল্প ও অপারেশনাল প্ল্যানের অধীন প্রকল্প কার্যালয় বা কমিউনিটি ক্লিনিক কর্তৃক কৃত কোন কার্য বা গৃহীত ব্যবস্থা বা ইস্যুকৃত বিজ্ঞপ্তি ট্রাস্ট কর্তৃক কৃত, গৃহীত বা ইস্যুকৃত বলে গণ্য হবে। সমাপ্ত প্রকল্প ও অপারেশনাল প্ল্যানের সকল দায়-দায়িত্ব ট্রাস্টের দায়-দায়িত্ব বলে গণ্য হবে। অপারেশনাল প্ল্যানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের সকল কর্মচারীর চাকরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রাস্টে ন্যস্ত হবে এবং উক্ত প্রকল্প ও প্ল্যানের অধীন চাকরির জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী তাদের চাকরির জ্যেষ্ঠতা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হবে। দেশে প্রচলিত অন্য সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় কর্মরত কর্মচারীদের ন্যায় তাদের স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতির সুযোগ, গ্র্যাচুইটি এবং অবসরভাতাসহ অন্য সুযোগ সুবিধা প্রাপ্য হবে।