স্বাস্থ্যবিধির একটি সাধারণ ও সহজ উপায় হলো হাত ধোয়া। প্রতিদিন বেশি বেশি হাত ধোয়ার চর্চা থাকতে হবে। এটি কোনো হেলাফেলার বিষয় নয়, এ অভ্যাস আপনার ধারণার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হাত ধোয়ার চর্চা আপনাকে বিভিন্ন মারাত্মক অসুস্থতা বা ইনফেকশন থেকে রক্ষা করতে পারে এবং আপনার অসুস্থতার জীবাণুও অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর সম্ভাবনা কমে যায়। এ প্রতিবেদনে হাত না ধোয়ার ৭ কুফল বা পরিণতি আলোচনা করা হলো।
* আপনার মারাত্মক শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত অসুস্থতা হতে পারে
আপনার পিতামাতা সবসময় যেটা বলেন তা সত্য: হাত ধোয়া এড়িয়ে চলার মানে হলো অসুস্থতার দিকে এগিয়ে যাওয়া। হাত ধোয়া এড়িয়ে চললে আপনার কমন কোল্ড বা সাধারণ ঠান্ডা লাগতে পারে, কিন্তু ঝুঁকি এর চেয়ে তীব্র হতে পারে। ফ্লু, নিউমোনিয়া, অ্যাডিনোভাইরাস এবং এমনকি হাত, পা ও মুখের রোগ হচ্ছে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত অসুস্থতা যা হাত না ধোয়ার কারণে বিকশিত হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে। হাত ধোয়ার চর্চায় ঠান্ডা ও শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি ১৬ থেকে ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
* আপনার ডায়রিয়া হতে পারে
সেসব লোকদের সহজেই ডায়রিয়া হতে পারে যারা হাত ধোয় না। ইউনিভার্সিটি অব কানসাস মেডিক্যাল সেন্টারের ইনফেকশন-কন্ট্রোল প্র্যাকটিশনার তানিয়া ম্যাকলেনটোশ বলেন, ‘একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হাতের স্বাস্থ্যবিধি হলো বাথরুমে যাওয়ার পর হাত ধোয়া। মলের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বিভিন্ন ধরনের ডায়রিয়া সম্পৃক্ত অসুস্থতার কারণ হতে পারে, যেমন- স্যালমোনেলা, নরোভাইরাস এবং ই. কোলাই ০১৫৭।’ সিডিসি’র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হাত ধোয়ার অভ্যাস ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া লোকের সংখ্যা ৩১ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে।
* আপনার ফুড পয়জনিং হতে পারে
ম্যাকলেনটোশ বলেন, ‘খাবার প্রস্তুতের সময় হাত ধোয়ার অভ্যাস আপনাকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি ক্রস-কন্টামিনেশন (অন্যান্য খাবার, কাটিং বোর্ড, অন্যান্য কিচেন সামগ্রী ও অন্যান্য জিনিসপত্র থেকে খাবারে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া স্থানান্তরিত হওয়া) প্রতিরোধ করে। কাঁচা মাংস, ময়লাযুক্ত শাকসবজি ও ডিমে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে- এসব খাবার সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করলে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন অথবা ফুড পয়জনিং হতে পারে।’
* আপনি অন্য লোকদের সংক্রমিত করতে পারেন
মনে রাখবেন যে সারাদিনের ব্যস্ততায় আপনার হাতকে বিভিন্ন স্থানে রাখেন, যেমন- দরজার হাতল। এর মানে হলো- যদি আপনি নিজের চোখ, মুখ, নাক বা মুখমণ্ডল স্পর্শ করে দরজার হাতলে আপনার হাত রাখেন, তাহলে আপনার পরে যারা এ হাতলে হাত রাখবে তারা আপনার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া দরজার হাতল স্পর্শে আসার পর হাত ধোয়ার চর্চা না থাকলে আপনিও অন্য লোকের জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন।
* আপনি দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকদের ঝুঁকিতে রাখছেন
রিস্টোরেটিভ পেইন সল্যুশনসের পেইন ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট ও অ্যানেস্থেশিওলজিস্ট ক্রিশ্চিয়ান হুইটনি বলেন, ‘হাত না ধোয়ার ঝুঁকি হলো, আপনি ক্ষতিকর ইনফেকশনের সংস্পর্শে আসতে পারেন এবং অন্যদের মাঝেও এ ইনফেকশন ছড়াতে পারেন, বিশেষ করে অল্পবয়সি শিশু-বয়স্ক লোক-দুর্বল ইমিউন সিস্টেম বা ইনফেকশন প্রবণ লোকদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।’ অন্যকথায়, বাথরুমে যাওয়ার পর অথবা সম্ভাব্য দূষিত খাবার স্পর্শের পর হাত না ধোয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার চারপাশের দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকদেরকে বড় জটিলতার ঝুঁকিতে রাখেন। হাত ধোয়ার ব্যাপারে সচেতন থেকে ঝুঁকি কমান।
* আপনি অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নষ্ট করছেন
প্রথম থেকে ইনফেকশনে আক্রান্ত না হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো হাত ধোয়া, তাই নিয়মিত হাত ধোয়ার মাধ্যমে ইনফেকশন ছড়ানোর সংখ্যা হ্রাস করা যেতে পারে, বিশেষ করে সেসব ইনফেকশন যা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এটি দুর্বলত ইমিউন সিস্টেমের লোকদের ডায়রিয়া সংক্রান্ত অসুস্থতার সম্ভাবনা প্রায় ৬০ শতাংশ কমাতে পারে। কম ইনফেকশনের মানে হলো কম অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা। শরীর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার। হাত ধোয়ার চর্চা আপনাকে সেসব জীবাণুঘটিত অসুস্থতার সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করতে পারে যা ইতোমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি প্রতিরোধী হয়ে পড়েছে।
* আপনি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ওপর খুব নির্ভরশীল হতে পারেন
হাত না ধোয়ার অন্যতম কারণ হলো হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও স্যানিটাইজিং ওয়াইপ নিশ্চিতভাবে আপনার জন্য উপকারী হতে পারে, কিন্তু সবসময় এসবের ব্যবহার ভালো নয়। মাঝেমাঝে সাধারণ সাবান ব্যবহারেরও প্রয়োজন রয়েছে, কারণ কিছু প্যাথোজেন আছে যা ধ্বংস করার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার কার্যকর নয়- এমন একটি প্যাথোজেন হলো সি. ডিফিসাইল, দীর্ঘসময় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে লোকজন এটিতে সংক্রমিত হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট