শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেঘনাদ শাহার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তার কাছ থেকে ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে একটি অসহায় পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা। ডা. মেঘনাদ সাহার বিরুদ্ধে জেলা সিভিল সার্জনের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করাছেন ভুক্তভোগী ওই পরিবার। অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিভিল সার্জন।
ভুক্তভোগী পরিবার ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেলেক্স সূত্রে জানাযায়, গেল বছরের ৪ মে একই উপজেলার হাজী আব্দুল লতিফ গাইন (৬৪) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে ভর্তি হন। ভর্তি রেজিস্টারে তার নামের সামনে ভর্তির কারণ বর্ণনা করে লেখা ছিল হাইপার টেনশন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিক, বাম কানে ফুলা। উপজেলা প:প: কর্মকর্তা ডা. মেঘনাদ সাহা নিজেই হাজী আব্দুল লতিফ গাইনকে ভর্তি দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় রেফার করেছেন মর্মে ভর্তি রেজিস্টারে উল্লেখ রয়েছে।এর কিছু দিন পরে হাজী আব্দুল লতিফ গাইনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের থেকে ওই ভর্তির বিপরীতে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। সেই সার্টিফিকেটে রোগীর ডান কানে ফুলা ও নাকে ১ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য এবং আধা ইঞ্চি গভীরতার একটি জখম আছে বলে লিখে দেন। জখমের প্রকৃতি গ্রিভিয়াস বলে উল্লেখ করা হয় সার্টিফিকেটে।
এ বিয়য়ে জানতে চাইলে ডা.আলমগীর হোসেন বলেন, এ সার্টিফিকেটে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে আমি স্বাক্ষর করেছি। এ রোগী আমি ভর্তি দেইনি এবং এ রোগী সর্ম্পকে আমি কিছুই জানি না।
সার্টিফিকেটটি সঠিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কোন মন্তব্য করবো না। আমার ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিদের্শে স্বাক্ষর করেছি তিনিই সব বলতে পারবেন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেঘনাদ সাহা বলেন, সার্টিফিকেট তো মেডিকেল অফিসাররা দেয়। আমি সার্টিফিকেট দেই নাকি? যদি কেউ আমার কথা বলে থাকে- তাকে আমরা সামনে হাজির করতে হবে।
এদিকে, এ সার্টিফিকেট নিয়ে হাজী আব্দুল লতিফ গাইন তার প্রতিবেশী মোতালেব গাইন ও তার ছেলের বিরুদ্ধে একটি মামলা দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত হয়রানি করে আসছে। অহসহায় এ পরিবারটি মিথ্যে মামলায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী মো. মোতালেব হোসেন গাইন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেঘনাদ সাহা সার্টিফিকেট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যখন যাকে ইচ্ছে যে কোন সার্টিফিকেট দিচ্ছে। সার্টিফিকেট বাণিজ্যের জন্য একটি দালাল চক্র তৈরি করেছেন তিনি। তাদের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে। ওই চক্রের মাধ্যমে তার কাছ থেকে মিথ্যা সার্টিফিকেট নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে আমার প্রতিপক্ষ। আমি সিভিল সার্জনের নিকট অভিযোগ করেছি। আমি এ মিথ্যে সার্টিফিকেট প্রদানের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. খলিলুর রহমান বলেন, ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেঘনাদ সাহার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগপত্র পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন