নিম্নবিত্ত শ্রেণি কিংবা ঢাকার বাইরে থেকে আসা দরিদ্র রোগীদের প্রধান ভরসাস্থল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। আর সেখানেই দালাল ও প্রতারকচক্রের প্রধান আখড়া। এদের নানা অপকৌশলের কারণে এখানে একেকজন রোগীকে নির্ধারিত মূল্যের ৬০ গুণ পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়। এরা এমন ব্যবস্থা করে রেখেছে যে এদের এড়িয়ে হাসপাতালের সেবা নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা ও নিম্নবিত্তের রোগীর স্বজনদের। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এদের এমন অনৈতিক তৎপরতা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। আবার হাসপাতাল প্রশাসনেরও কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধেও এদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার অভিযোগ আছে। গতকাল কালের কণ্ঠে এ বিষয়ে যে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা পড়লে যেকোনো সজ্জন ব্যক্তি মনঃকষ্টে ভুগবেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হাসপাতালে কোনো রোগী এলেই দালালরা তৎপর হয়ে ওঠে এবং শুরু হয় রোগীদের ভোগান্তি। তাদের হুইলচেয়ার বা ট্রলিতে করে রোগীকে হাসপাতাল ভবনে ঢুকতে হয়। এ জন্য আদায় করা হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। আর যদি রোগীকে ধরে তুলতে হয় বা অন্য রকম সহযোগিতা দিতে হয়, তাহলে দাবি করা হবে কমপক্ষে ৫০০ টাকা। রোগীকে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে নেওয়া হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। বেড পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে নেওয়া হয় আরো ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। সব মিলিয়ে রোগীপ্রতি শুরুতেই হাজার দেড়েক টাকা হাতিয়ে নেয় দালালচক্র। অথচ নিয়মানুযায়ী একজন রোগী প্রথমে ১০ টাকার টিকিট কিনে চিকিৎসক দেখাবেন। ভর্তির প্রয়োজন হলে পরে রোগীকে আরো ১৫ টাকার একটি টিকিট কিনতে হবে। এই ২৫ টাকার বাইরে আর কোনো খরচই হওয়ার কথা নয়। রোগীর ভোগান্তি শুধু ভর্তিতেই নয়, সিটিস্ক্যান, এক্স-রে বা অন্য কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হলেও দালালদের সহযোগিতা নিতে হয়। প্রতিটি জায়গায় দীর্ঘ লাইন। বাস্তবেই দেখা যায়, দালালদের পয়সা দিলে কাজটি আগে হয়ে যায়। অভিযোগ আছে, ভেতরে থাকা এন্ট্রিকর্মীর সঙ্গে যোগসাজশ থাকায় তারা সিরিয়াল আগে করিয়ে নিতে পারে। হাসপাতালকে দালালমুক্ত রাখার দায়িত্ব পালন করেন যে আনসার সদস্যরা তাঁদেরও কারো কারো সঙ্গে দালালদের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা যায়। এ অবস্থায় সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি কমবে কিভাবে?
ঢামেক হাসপাতাল দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির প্রধান ভরসাস্থল হওয়ায় একে দালালমুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা আশা করি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে র্যাব বা পুলিশের বিশেষ অভিযানও চালানো যেতে পারে।