শরীরের তাপমাত্রা সামান্য উঠলেই, কিংবা পেটে একটু মোচড় দিলেই আমরা ছুটি অ্যান্টিবায়োটিক আনতে। সাধারণ অসুখবিসুখ তো বটেই, অনেক গুরুতর অসুখেও আমাদের প্রথম উপায় এই ওষুধটি।
কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিকে অসুখ একটু সারলেই ব্যাস, বাকি অ্যান্টিবোয়োটিকগুলো পড়েই থাকে। ঘরে ঘরে এই সাধারণ ছবির বিষয়টি ভাবাচ্ছে চিকিৎসক মহলকে। তাতে উৎসাহ জোগাচ্ছে বিশ্বের কিছু গবেষণাও। যখন তখন মুঠোমুঠো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে রাশ না টানলে অপেক্ষা করছে অপূরণীয় ক্ষতি।
কেবল ভারতে নয়, গোটা বিশ্বেই যখন ইচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কোর্স না শেষ করে মাঝপথেই ওষুধ বাদ দেওয়ার অভ্যাস।
একদিকে, মুড়িমুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া, অন্যদিকে ওষুধের নির্দিষ্ট কোর্স শেষ না করা- সবই ধীরে ধীরে ডেকে আনছে মরণ ব্যাধি- এমনটিই মনে করছেন চিকিৎসকরা। ব্যস্ততার জীবনে এই অসুখ ডেকে আনার প্রবণতা নিয়ে চিন্তায় তাঁরা।
শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী শক্তি নিয়েই হানা দিচ্ছে যেসব ব্যাকটিরিয়া, ‘ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল’ (ইসিডিসি)-এর গবেষকরা তাদের নাম দিয়েছেন ‘সুপারবাগ’। ইউরোপ মহাদেশে সুপারবাগের প্রকোপে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে ৩৩ হাজার মানুষ।
এই অসুখটি কী?
ভারতীয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটাকেই আসলে মেরে ফেলছি আমরা। ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিক পড়ায় অসুখের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াও সেসব অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে লড়াই করতে নিজেদের বিবর্তিত করে নিতে পারছে।
সোজা কথায়, অবৈজ্ঞানিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে শরীর হারাচ্ছে জীবাণুর সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা। তাই আজকাল ভাইরাল ফিভার থেকে শুরু করে একটু অচেনা ব্যাকটিরিয়ার হানা রুখতে পারছে না শরীর। এতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ভাস্কর কুমার দাসের মতে, প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যাকটিরিয়া মারতে আর অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। অথচ ব্যাকটিরিয়া থেকে সংক্রমণ হলে তো অন্য কোনও উপায়ও নেই। তখন ওই সংক্রমণটিই চরম আকার ধারণ করছে।
‘ল্যান্সেট ম্যাগাজিন ইনফেকশস ডিজিজেস’ শিরোনামের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যক্ষ্মা বা এইচআইভি-এর থেকে কিছু কম ভয়ঙ্কর নয় এই রোগ। কেবল ইউরোপ নয়, সারা বিশ্বেই ধীরে ধীরে থাবা বসাচ্ছে এই রোগ। ভারতেও প্রায় প্রতিবছরই এমন কিছু ব্যাকটিরিয়াঘটিত অসুখের দেখা মেলে, যা প্রায় কোনওরকম অ্যান্টিবায়োটিকেই আয়ত্তে আসে না।
অ্যান্টিবায়োটিক থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে চলা ব্যাকটিরিয়া মোট পাঁচ ধরনের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি থেকে রোগী আক্রান্ত হন হাসপাতালের ভেতর। এমন অনেক সংক্রমণ রয়েছে যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকই শেষ কথা, সুপারবাগ সেই অ্যান্টিবায়োটিককে নিষ্ক্রিয় করে দিচ্ছে।
তা হলে উপায়?
চিকিৎসকদের মতে, অ্যান্টিবায়োটিক নির্ভর জীবন থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। শুধু তা-ই নয়, অসুখের আক্রমণ এলেও অল্পেই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলা এবং কোর্স শেষ না করার অভ্যাসে রাশ টানা জরুরি। নইলে সুপারবাগের শিকার হতে পারেন অজান্তেই।