নার্সিং ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজ ও মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট— সরকারের এই তিন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে ভর্তির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউটে অবৈধভাবে ভর্তির জন্য একেক জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। আর নার্সিং ইনস্টিটিউট ও নার্সিং কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যারা অকৃতকার্য হয়েছেন, এমন শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য গুনতে হচ্ছে আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবৈধ এই ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তাকে এরইমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। শিরীনা দেলহুরা নামে ওই কর্মকর্তা বর্তমানে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরে পরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত আছেন। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শিরীনা আক্তার ও ডুপ্লিকেটিং মেশিন অপারেটর এনামুল হক। ঘুষ ও তদবিরের কাজগুলোও এই এনামুলই করে থাকেন।
২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন মোসা. মাহমুদা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভর্তির সুযোগ পান তিনি। অকৃতকার্য হয়েও কীভাবে তিনি ভর্তির সুযোগ পেলেন, তা খতিয়ে দেখতে গিয়েই ভর্তি নিয়ে জালিয়াতি, ঘুষ এবং দুর্নীতির তথ্য পায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর।
এ বিষয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালক তন্দ্রা শিকদারের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনেও কথা বলতে রাজি হননি তিনি। এমনকি অফিসে গিয়েও তন্দ্রা শিকদারের দেখা মেলেনি।
মাহমুদার ভর্তি এবং শিরীনা দেলহুরার দুর্নীতি
মাহমুদার ভর্তি নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালক তন্দ্রা শিকদার গত ১১ এপ্রিল শিরীনা দেলহুরাকে চিঠি দেন। ওই চিঠির বিষয়:‘২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সে ভর্তির জন্য অনির্বাচিত প্রার্থী মোছা. মাহমুদাকে (রোল নং-৬৩২১৭৮) ভর্তির জন্য জারি করা চিঠির বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান প্রসঙ্গে।’
এ বিষয়ে শিরীনা দেলহুরার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য মাহমুদাকে ভর্তির জন্য চলতি বছরের ২৪ মার্চ পত্র জারি করেছেন। ওই পত্র জারি করা হয়েছে একটি শিরোনামহীন ফাইল কাভারে, যাতে কোনও নোট পাতা নেই। জারি করা পত্রের অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, অতিরিক্ত সচিব (চিকিৎসা-শিক্ষা) এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে— অনুলিপি কোথাও পাঠানো হয়নি। জারি করা পত্রটি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়নি।’
তন্দ্রা শিকদারের চিঠিতে শিরীনার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে আরও বলা হয়, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই নিয়মবহির্ভূতভাবে মাহমুদাকে ভর্তি করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০০৮-এর আওতায় অপরাধ করা হয়েছে।’
এই চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে শিরীনা দেলহুরা শুরুতে বলেন, ‘এটি অফিসের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’ পরে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে মহাপরিচালকের কাছে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তিনি ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট বলে মনে করি।’ দেলহুরা আরও বলেন, ‘মাহমুদার বিষয়টি সেরকম কিছু না।’
দেশে সরকারি মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট রয়েছে ৩৮টি। বছরে প্রতিটি ইনস্টিটিউটে ২৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হন। সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে ৪৩টি। বছরে প্রতিটি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন ৭৫ জন করে। আর সরকারি নার্সিং কলেজ আছে ১১টি। বছরে প্রতিটি কলেজে ভর্তি হন ১০০ জন করে। অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউটে প্রতিবছর ভর্তি হন ৯৫০ জন। নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন মোট ৩ হাজার ২২৫ এবং নার্সিং কলেজে ভর্তি হন ১২১০ জন।
ভর্তি নিয়ে যেভাবে দুর্নীতি হয়
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মিডওয়াইফারি ও নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং নার্সিং কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় যারা অকৃতকার্য হন,তাদের অনেকেরই ভর্তির নির্ধারিত কোটা পূরণ হচ্ছে না, এমন অজুহাত দেখিয়ে ভর্তি করা হয়। অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নিয়মবহির্ভূতভাবে এই ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেও কাউকে কাউকে ভর্তি করাতে হয়। আর প্রক্রিয়াটাই হয়ে থাকে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে।
ভর্তি নিয়ে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে সহকারী পরিচালক শিরীনা আক্তারের বিরুদ্ধে। চেষ্টা করেও এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ডুপ্লিকেটিং মেশিন অপারেটর এনামুল হক বলেন, ‘কাগজপত্র প্রসেসিং ছাড়া তার কোনও কাজ নেই।