প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ এক থেকে তিন কাপ কফি পানে দিন শুরু করেন। বর্তমানে সকালের রুটিনে কফি পান বেশ জনপ্রিয় অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অনেকে দিনে তিন কাপেরও বেশি কফি পান করে থাকেন। তারা এটা মাথায় রাখেন না অতিরিক্ত কফি পানে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাহলে কতটুকু কফি পান নিরাপদ?
নতুন একটি গবেষণা এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। কতটুকু কফি পান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী অথবা কতটুকু কফি পানে স্বাস্থ্যেরের ক্ষতি হয় তা সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হলো।
* কফির স্বাস্থ্য উপকারিতা কি?
যদি আপনি স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার ভয়ে কফি মেকার ফেলে দিতে চান, তাহলে ভুল করবেন। কারণ, প্রতিদিন কফি পানে স্বাস্থ্যের প্রচুর উপকার হয়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে সার্কুলেশনে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, কফি পানের সঙ্গে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাসের সম্পর্ক রয়েছে। কফি পানে কার্ডিওভাস্কুলার রোগ বা হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, পারকিনসন’স রোগ, জরায়ু ও যকৃতের ক্যানসার, সিরোসিস বা যকৃতের ক্ষত এবং গাউট বা গেঁটেবাতের ঝুঁকি হ্রাস পায়, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কিছু গবেষণাভিত্তিক প্রতিবেদন অনুসারে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণায় পাওয়া যায়, ক্যাফেইনযুক্ত ও ক্যাফেইনমুক্ত উভয় কফি পানে অকালে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আরো গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, কফি পান ও ক্যানসারের মধ্যে কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। আপনার ডিএনএ ড্যামেজ প্রতিরোধেও কফি সাহায্য করে, এর জন্য ধন্যবাদ পাবে কফি বিনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান।
* যতটুকু কফি পানে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়
কফি স্বাস্থ্যকর হলেও দিনে ছয় কাপ কফি পান করবেন না। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়ার নতুন গবেষণায় পাওয়া যায়, দিনে ছয় কাপ বা এর বেশি পরিমাণ কফি পান কফির কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি ২২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে। এ গবেষণাটিতে দীর্ঘসময় কফি পান ও কার্ডিওভাস্কুলার রোগের মধ্যে যোগসূত্র পাওয়া যায় কিনা তদন্ত করা হয় এবং দেখা যায় যে অত্যধিক কফি পান উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা হৃদরোগের দিকে টানে, সায়েন্স ডেইলির প্রতিবেদন অনুসারে।
এ গবেষণার গবেষক ও অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার অব প্রিসিশন হেলথের অধ্যাপক এলিনা হিপোনেন সায়েন্স ডেইলিকে বলেন, ‘বিশ্বের সর্বাধিক পানকৃত স্টিমিউল্যান্ট বা উদ্দীপক হলো কফি- এ পানীয় আমাদেরকে জেগে থাকতে, শক্তি বাড়াতে ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কিন্তু লোকজন প্রায়সময় জিজ্ঞেস করে যে, কতটুকু কফি পান নিরাপদ মাত্রা অতিক্রম করে? অধিকাংশ লোকে একমত হবেন যে প্রচুর কফি পানে অস্থিরতা, মেজাজ খিটখিটে অথবা বমিবমি ভাব হতে পারে- এর কারণ হলো ক্যাফেইন আপনার শরীরকে দ্রুত ও কঠোর পরিশ্রম করতে প্ররোচিত করে। কিন্তু এসব উপসর্গ প্রতিরোধের জন্য আপনি কফি পান সীমিত করতে পারেন।’ যদি আপনি এসব উপসর্গ অনুভব না করেন তাহলে সর্বোচ্চ পাঁচ কাপ পর্যন্ত কফি পান করতে পারেন, কিন্তু হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে ও কফি পানের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিশ্চিত করতে আরো কম মাত্রায় কফি পান করা ভালো।