প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু ভুল ধারণা

ছোটখাট দুর্ঘটনা কিংবা শারীরিক সমস্যায় প্রচলিত প্রাথমিক চিকিৎসাগুলো সম্পর্কে হয়ত ভুল জানছেন।

পোড়া, কাটাছেড়া, আঘাত পাওয়া- এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলার কিছু না কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানেন বেশিরভাগ মানুষ।

আশপাশের মানুষকে দেখে, পরিবারের গুরুজনদের কাছ থেকে শুনে কিংবা ফার্মেসিতে ‘ড্রেসিং’ করাতে গিয়ে মানুষ এই কৌশলগুলো রপ্ত করে থাকেন। তবে এই কৌশলের মধ্যে ভুল থেকে যাওয়া সম্ভাবনা যেমন প্রকট তেমনি সেই ভুলের প্রভাবও হতে পারে ভয়ানক।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে এবং বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফয়সাল আহমেদের পরামর্শ অনুযায়ী জানানো হল প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক ভুল ধারণা সম্পর্কে।

নাক থেকে রক্তক্ষরণ: নাক থেকে রক্ত পড়লে মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে নাক উপরের দিকে উঠিয়ে রাখলে রক্ত বন্ধ হয় বলে মনে করেন অনেকেই, যা আসলে খুব একটা উপকারে আসে না‍। বরং এরসঙ্গে অন্য ঝুঁকি আছে। এমনটা করলে রক্ত গলা দিয়ে নিচে নামতে পারে এবং রোগী সেই রক্ত গিলে ফেলতে পারে। এতে পাকস্থলিতে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে এবং বমি হতে পারে।

এরচাইতে কার্যকর উপায় হল সামনে দিকে ঝুঁকে নাকের ডগায় চেপে ১০ মিনিট ধরে রাখা। রক্তপাত এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেশিরভাগ সময় নাক থেকে রক্তক্ষরণের কারণ হয় ‘অ্যালার্জি’ কিংবা শুষ্ক আবহাওয়া। তবে ১০ মিনিটে রক্ত বন্ধ না হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

পোড়া ক্ষতে বরফ: পোড়া ক্ষতে বরফে দেওয়া মোটেই উচিত নয়। কারণ, এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে, আক্রান্ত ব্যক্তি ‘ফ্রস্ট বাইট’য়ের শিকার হতে পারেন। মাখন কিংবা টুথপেস্টও প্রয়োগ করার ধারণা প্রচলিত আছে, যা আরও ভয়ানক। পোড়া ক্ষতে ঠাণ্ডা পানি ঢালতে হবে আর পরিষ্কার শুকনা কাপড় দিয়ে আলতো চাপে তা মুছে নিতে হবে।

আঘাতপ্রাপ্ত মানুষকে নড়াচড়া করানো: যেকোনো দুর্ঘটনায় আঘাত পাওয়া ব্যক্তিকে কখনই তৎক্ষণাত নড়াচড়া করানো যাবে না। অনেকে আবার আঘাত পাওয়া পর নিজেই শরীর নড়াচড়া করে দেখেন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। আঘাত পাওয়া স্থানটি নড়াচড়ার কারণে ‘স্পাইনাল কর্ড’য়ে মারাত্বক আঘাত লাগতে পারে। যে কারণে স্থায়ী স্নায়বিক ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে।

দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তিতে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই হবে সবচাইতে শ্রেয়।

চিড় ধরা হাড়ে গরম ভাপ: ব্যথায় আরাম দিতে কিংবা সারাতে সেঁক দেওয়া আসলেই উপকারী। তবে রগে টান পড়া কিংবা হাড় ফেটে গেলে সেখানে সেঁক বা গরম তাপ দেওয়া কোনো উপকারে আসে না। উল্টো ফোলার পরিমাণ বাড়ায়।

তাই হাড় ফাটলে সেখানে বরফ দিতে হবে। কয়েকটি বরফ ভেঙে কুচি করে একটি থলে কিংবা পরিষ্কার কাপড়ে পেঁচিয়ে তা আঘাতপ্র্রাপ্ত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। কিছুক্ষণ পর পর তার পুনরাবৃত্তি করতে হবে।

চোখ থেকে ময়লা অপসারণ: চোখে ধুলা পড়লে প্রচণ্ড অস্বস্তি হয়। এই অবস্থায় চোখ ডললে ময়লা আরও ভালো ভাবে ঢুকে যায়। ফলে চোখে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

তাই চোখ না ডলে পানির ছিটা দিতে হবে।

কাটা ক্ষতে থুতু দেওয়া: অনেকেই মনে করেন লালারস বা থুতু দিয়ে জীবাণু পরিষ্কার করা যায়, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। লালারসে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে যা ক্ষতের অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে। থুতু না দিয়ে পরিষ্কার কলের পানি ক্ষতের উপর ঢেলে ধুলাবালি পরিষ্কার করতে হবে।

কাটা ক্ষতে আঠাল ব্যান্ডেজ: সামান্য ক্ষতে ব্যাকটেরিয়ানাষক মলম মাখিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে রাখা উচিত কাজ বলেই মনে হয়। তবে এমনটা করলে ক্ষত সারার প্রক্রিয়া দ্রুত হয় না। বরং ক্ষতস্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করে তাতে মলম মাখিয়ে খোলা রাখতে হবে, যাতে বাতাস পায় এবং দ্রুত শুকাতে পারে। খুব প্রয়োজন না হলে ব্যান্ডেজ ব্যবহার না করাই ভালো। আর ব্যান্ডেজ বাঁধলে দিনে দুবার তা পরিবর্তন করতে হবে।

সাবধাতা

প্রাথমিক চিকিৎসা পরিপূর্ণ চিকিৎসা নয়, সাময়িক সাবধানতা মাত্র। তাই যেকোনো দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার পর অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *