বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গত এক দশকে রাজধানীসহ সারাদেশে তিন শতাধিক নতুন চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ, সরকারি ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিট, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিট, সরকারি ও বেসরকারি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ও সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস)।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদফতরের (চিকিৎসা শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন) শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে দেশে চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৪৪টি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৭টি। এ হিসেবে গত এক দশকে রাজধানীসহ সারাদেশে মোট চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২৩টি।
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক দশকে ব্যাঙের ছাতার মতো বিভিন্ন চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, গত এক দশক আগে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭২টি। বর্তমানে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০টি।
এসব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে ওঠা মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের অধিকাংশেরই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাবরেটরি সুবিধাদি নেই। বিভিন্ন সময় সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে তারা ভয়াবহ চিত্র দেখেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক দশক আগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র একটি। বর্তমানে এ সংখ্যা চারটি। একইভাবে সরকারি মেডিকেল কলেজ ১৭ থেকে ৩৬টি, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৪০টি থেকে ৬৯টি, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ একটি থেকে ৬টি, সরকারি ডেন্টাল কলেজ ইউনিট ৩টি থেকে ৯টি, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ ইউনিট ১১টি থেকে ২৬টি, সরকারি আইএইচটি ৩টি থেকে ১১টি, বেসরকারি আইএইচটি ৩৮টি থেকে ৯৭টি, সরকারি ম্যাটস ৭টি থেকে ১০টি ও বেসরকারি ম্যাটস ২৩টি থেকে ২০০টি-তে উন্নীত হয়েছে।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ছাড়া যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়েছে সেগুলো লাগাম টেনে ধরার সময় এসেছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে বাধ্য করা প্রয়োজন। অন্যথায় ভবিষ্যতে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা চিকিৎসকদের কারণে রোগীরা ভুল চিকিৎসার শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।