৫০ শয্যায় দেড়শ রোগী!

লোহাগাড়ার বাসিন্দা রফিক মিয়া দীর্ঘদিন কোমরের ব্যথায় ভুগছেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এমআরআই করানোর পর রফিক মিয়ার মেরুদণ্ডে ত্রুটি ধরা পড়ে। চিকিৎসক রফিক মিয়ার অস্ত্রোপচার প্রয়োজনের কথা জানালেও গত ২০ দিনেও সেটি সম্ভব হয়নি।

সরেজমিন দেখা যায়, সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারছেন না রফিক মিয়া। তিনি বলেন, দুইবার অস্ত্রোপচারের তারিখ নির্ধারণের পরেও পরিবর্তন করা হয়েছে। ওষুধ কিনে ফেলে রাখা হয়েছে।

নিউরোসার্জারি বিভাগে রফিক মিয়ার মতো এমন অনেক রোগী অপেক্ষায় রয়েছেন। কবে তাদের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হবে, তা তারা জানেন না।

বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিভাগে অনুমোদিত শয্যা রয়েছে ৪৯টি। তবে নিয়মিত দেড়শ’র বেশি রোগী ভর্তি থাকছেন। এর মধ্যে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন এমন রোগীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক। জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হয় অনেক রোগীকে। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল, যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে বিভাগে।

নিউরোসার্জারি বিভাগটি হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম ওয়ার্ড। দুর্ঘটনা, মারামারির ঘটনায় মাথায়, মেরুদণ্ডসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ বিভাগে সেবা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্রেন টিউমার অপসারণসহ জটিল অস্ত্রোপচারগুলো সেখানে হয়।

কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে পুরনো যন্ত্রপাতি, জনবল সংকটে চলছে এ বিভাগের সেবা। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না এ অঞ্চলের বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, অস্ত্রোপচারের টেবিলটি বেশ পুরনো। জরাজীর্ণ হয়ে আছে। ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির বয়স দুই দশক ছাড়িয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতির দেখা মেলেনি অস্ত্রোপচার কক্ষটিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিউমেটিক ড্রিল মেশিন না থাকায় অস্ত্রোপচারের সময় মস্তিষ্ক ছিদ্র করতে হয় হাডসন ব্রেস দিয়ে। এ ছাড়া অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ, নিউরো-এন্ডোস্কোপের মতো যন্ত্রপাতি বিভাগটিতে আনা হয়নি।

এদিকে বিভাগটিতে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিশু। বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের চিকিৎসা অনেক জটিল। এজন্য আলাদা বিভাগ প্রয়োজন হলেও হাসপাতালে সেটি নেই। ফলে শিশু রোগীদের নিয়ে আলাদা সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

নিউরোসার্জারির চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় গরীব-অসহায় রোগীরা বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের সেবাও নিতে পারছেন না। ফলে দিনের পর দিন হাসপাতালের শয্যায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

অন্যদিকে বিভাগের দালালদের দৌরাত্ম্যও রয়েছে। সুযোগ বুঝে অসহায় মানুষকে প্রলোভনে ফেলে সব হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র।

বিভাগের প্রধান এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, রোগীর তুলনায় সুবিধা কম। তবুও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন চিকিৎসক-নার্সসহ সকলে।

‘পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে অস্ত্রোপচার চলছে। জটিল অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) প্রয়োজন হলেও এ বিভাগে সেটিও নেই। পর্যাপ্ত নার্স না থাকায় ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। চিকিৎসকরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে সেবা দিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, অনেক সময় জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন- এমন রোগী ভর্তি হন। তখন নির্ধারিত রোগীর অস্ত্রোপচার না করিয়ে জরুরি সেবা দিতে হয়।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বলেন, নিউরোসার্জারি বিভাগকে আধুনিকায়ন করা হবে। পাশাপাশি জনবল সংকটও সমাধান করা হবে। আশাকরি শিগগির সংকট কাটবে।

এখনো বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর চিকিৎসার শেষ আশ্রয় এ হাসপাতাল। সাধারণ থেকে জটিল সব রোগের চিকিৎসা এ হাসপাতালে দেওয়া হয়। ২৫ টাকার টিকিটের বিনিময়ে হাসপাতালটিতে সেবা মেলে। তবে রোগীর তুলনায় সুবিধা সীমিত। এজন্য চাহিদামতো সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।

প্রতিদিন এ হাসপাতালে জরুরি সেবা নিতে ছয়শ থেকে নয়শ রোগী ভর্তি হন। নিয়মিত হাসপাতালে ভর্তি থাকেন দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী। এ ছাড়া বহির্বিভাগে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী সেবা নেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *