সরকারিভাবে বিনামূল্যে চালু হচ্ছে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা

দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চালু হচ্ছে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহসহ ব্লাড ট্রান্সফিউশন এবং থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় কার্যক্রম। আগামী অর্থবছরে এ খাতে বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রমটি শুরু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহারিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া চলতি বছরে দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করতে ছয় কোটি টাকা দেওয়ারও ঘোষণা দেন তিনি।

বুধবার (০৮ মে) রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভবনে ‘থ্যালাসেমিয়া রোগ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন ঘোষণা দেন। বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে সেমিনারটির আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সেমিনারে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগটি নিয়ন্ত্রণ এমনকি নির্মূল করা সম্ভব। কেননা, রোগটি প্রকট আকার ধারণ করেনি। তাই ব্যাপক জনসচেতনতা অর্জন করার পাশাপাশি বিনামূল্যে রোগ নির্ণয়সহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বা এ অর্থবছরে বিনামূল্যে ওষুধের জন্য নির্ধারিত বাজেট থেকে ছয় কোটি টাকা থ্যালাসেমিয়ার ওষুধ সরবরাহের কাজে দেওয়া হবে। যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে দেওয়া হবে। এছাড়া আগামী অর্থবছরে বিনামূল্যে চিকিৎসা বা ব্লাড ট্রান্সফিউশন, থ্যালাসেমিয়ার ওষুধ সরবরাহ এবং রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও রিএজেন্ট (প্রয়োজনীয় ক্যামিকেল) সরবরাহ করা হবে। তবে শুরুতে এ কার্যক্রম শুধুমাত্র দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে পরিচালিত হবে।

এছাড়া থ্যালাসেমিয়ায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর কথাও বলেন মহাপরিচালক। 

তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগ নির্ণয়, ব্লাড ট্রান্সফিউশন ও ওষুধ সরবরাহ আলাদা আলাদা জায়গায় হবে না, এক স্থানে হবে। এই ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমেই ভোগান্তি কমবে।

অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) অধ্যাপক ডা. আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এমএ খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আসাদুল ইসলাম, জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মাজহারুল হক তপন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষে ডা. মুরাদ সুলতান, অবস্টেট্রিক্যাল গাইনোকলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের পক্ষে অধ্যাপক ডা. ফিরোজা বেগম, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. একেএম একরামুল হোসাইন স্বপনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টেক হোল্ডাররা।
 
সেমিনারে অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশে থ্যালাসেমিয়ায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের তালিকা এবং ওষুধ বিতরণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বক্তারা।

দেশে প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে ৩৩টি শিশু থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায় পর্যন্ত এ রোগের সেবা পৌঁছে দিতে পারলেই নির্মূল ও জনসচেতনতা পূর্ণ মাত্রায় সম্পন্ন করা সম্ভব। এছাড়া স্কুল পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে জানাতে পাঠ্য বইয়ে একটি সংযোজনা রাখা যেতে পারে। যেভাবে অটিজম রাখা হয়েছে। জেএসসি পর্যায়ে স্কুলেই টেস্ট করিয়ে রাখতে পারলে প্রতিরোধে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবো। এছাড়াও এ বিষয়ে উচ্চ-আদালতের নির্দেশনা কঠোরভাবে মানার ব্যবস্থা করতে হবে।

থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই বিয়ে করা যাবে না। আর মনে রাখতে হবে বাবা-মা উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক না হলে শিশু এই রোগে আক্রান্ত হবে না। তাছাড়া সমাজে এদের হেয় করা যাবে না।

এদিকে, নিরাপদে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ব্লাড ট্রান্সফিউশন করানো জরুরি উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের যেভাবে ব্লাড ট্রান্সফিউশন করানো হচ্ছে, তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নিরাপদভাবে ব্লাড ট্রান্সফিউশন করা না হলে রোগীরা হেপাটাইটিস বি ও সি’তে আক্রান্ত হলে মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকরাও ওই রোগীকে দেখতে চান না। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আগে সচেতন করতে হবে। সে কর্মসূচিও অধিদফতরের নেওয়া উচিত।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *