৩ বছর ধরে বিকল ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমআরআই ও সিটিস্ক্যান মেশিন

সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ চিকিৎসাকেন্দ্র এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ৯০০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। এছাড়া বহির্বিভাগে সেবা নেন গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার রোগী। অথচ প্রায় তিন বছর ধরে বিকল হয়ে আছে হাসপাতালটির দুটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ নির্ণয় যন্ত্র ম্যাগনেটিক রিসোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) ও সিটিস্ক্যান মেশিন। এতে বিপাকে পড়ছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। বাইরের বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্র থেকে উচ্চমূল্যে এসব পরীক্ষা করাতে হচ্ছে তাদের।

হাসপাতালটির রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে থাকা একমাত্র এমআরআই যন্ত্রটি ২০১৬ সালের ২০ জুন থেকে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। একই বছরে নষ্ট হয়ে পড়ে হাসপাতালের সিটিস্ক্যান মেশিনটিও। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এরই মধ্যে নতুন সিটিস্ক্যান মেশিন হাসপাতালে আনা হয়েছে। আর এমআরআই মেশিন মেরামতের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিক চিঠি দেয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের টেকনিক্যাল দল এসে যন্ত্রটি দেখে গেছে। তবে মেরামত করলেও এ যন্ত্র কোনো কাজে আসবে না, এমন প্রতিবেদন দিয়েছে তারা। এ অবস্থায় নতুন এমআরআই যন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এমআরআই ও সিটিস্ক্যান মেশিন দিয়ে রোগ নির্ণয় পরীক্ষা বেশ ব্যয়বহুল। যন্ত্র দুটি চালু থাকলে হাসপাতালেই প্রতিদিন গড়ে অর্ধশতাধিক রোগী রোগ নির্ণয়ের সুযোগ পেতেন। এখন বাইরের রোগ নির্ণয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দুটি করাতে বড় অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয় রোগীদের।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমআরআই টেস্ট করাতে খরচ পড়ে ৩-৪ হাজার টাকা। অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এজন্য সাড়ে ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা গুনতে হয়। সিটিস্ক্যানের ক্ষেত্রেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বিগুণের বেশি টাকা নেয়।

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে সিলেটের কানাইঘাট থেকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ভ্যানচালক আব্দুল কাদের। রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক তাকে সিটিস্ক্যান করানোর পরামর্শ দিয়েছেন। গতকাল সকালে আব্দুল কাদেরকে নিয়ে সিটিস্ক্যান করানোর জন্য হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে যান তার স্ত্রী। কিন্তু সেখানকার সিটিস্ক্যান মেশিন বিকল থাকায় ফিরে যান দরিদ্র এ রোগী। শুধু আব্দুল কাদের নন, গতকাল ওসমানী হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ থেকে এভাবে ফিরে যেতে দেখা যায় আরো অনেক রোগী এবং তাদের স্বজনদের।

আব্দুল কাদেরের স্ত্রী হাসনা বেগম বলেন, বাইরে পরীক্ষা করানোর মতো এত টাকা আমার কাছে নেই। আবার এ পরীক্ষা না করালে চিকিৎসাও হবে না। এখন কী যে করি!

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে অবৈধ সুুবিধা নিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তারা বিকল থাকা এ যন্ত্রগুলো চালু করতে বিলম্ব করছেন। এতে কিছু অসাধু কর্মকর্তা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও বিপুলসংখ্যক দরিদ্র রোগী চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে যন্ত্রগুলো নষ্ট হয়ে আছে। শুনেছি সিটিস্ক্যান মেশিন চলে এসেছে। কিন্তু চালু করতে কেন বিলম্ব করা হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।

ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছ রহমান বলেন, এরই মধ্যে সিটিস্ক্যান মেশিন বসানো হয়েছে, শিগগিরই উদ্বোধন করা হবে। নতুন এমআরআই মেশিনের জন্য চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। গত মাসেও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আশা করি, অল্পদিনের মধ্যে নতুন মেশিন পেয়ে যাব।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *