স্থূলতা ও মস্তিষ্কের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি বিজ্ঞানীদের কাছে বরাবরই কৌতূহলোদ্দীপক। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি নতুন অনেক তথ্য আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। এর পরও অনেক কিছুই এখনো তাদের কাছে ধাঁধার মতো। সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণায় এসব ধাঁধার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উত্তর খুঁজে বের করেছেন তারা। সার্বিকভাবে এসব গবেষণা একটি দিকই নির্দেশ করছে। সেটি হলো, মস্তিষ্কের ওপর স্থূলতার প্রভাব একেবারেই নেতিবাচক। খবর মেডিকেল নিউজ টুডে।
একটি গবেষণায় দেখা যায়, মানবদেহের পাকস্থলীর স্থূলতার সঙ্গে মস্তিষ্কের আকার ছোট হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষত গ্রে ম্যাটারের পরিমাণ বেশ কমে যায় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
আরেক গবেষণায় উঠে আসে, অতিভোজনকারীদের (অর্থাৎ যাদের ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতার আশঙ্কা বেশি) মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের (মস্তিষ্কের যে অংশ জটিল চিন্তা, পরিকল্পনা ও আত্মনিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে) সক্রিয়তা তুলনামূলক কম থাকে।
সব মিলিয়ে এসব গবেষণায় পাওয়া ফলাফল বলছে, স্থূলতার কারণে মস্তিষ্কের সক্ষমতা কমে যায় ও স্মৃতিভ্রংশ দেখা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্থূলতা ঠিক কীভাবে মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, সে বিষয়টিকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে নতুন এক গবেষণায় ব্রতী হন নেদারল্যান্ডসের লেইডেন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের ডা. ইলোনা এ ডেক্কার্স ও তার সহকর্মীরা।
নতুন এ গবেষণায় প্রমাণ হয়, স্থূলকায় ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে গ্রে ম্যাটারের পরিমাণ কম থাকে। এর মধ্য দিয়ে আগের বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা তথ্যগুলোকেই আরো জোরালো করে তুললেন গবেষকরা।
গবেষণাটিতে মস্তিষ্কের আকার-আকৃতিতে স্থূলতার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আরো বেশকিছু তথ্য উঠে আসে। স্থূলতা ও মস্তিষ্কের গঠনের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ককে বোঝার জন্য ডা. ইলোন এ ডেক্কার্স ও তার সহকর্মীরা এমআরআই স্ক্যানিংয়ের একেবারে সর্বাধুনিক ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রযুক্তির শরণাপন্ন হন। স্ক্যান করা হয় যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাংক ইমেজিং স্টাডিতে অংশ নেয়া ১২ হাজারেরও বেশি মানুষের মস্তিষ্ক। গবেষণায় পাওয়া ফলাফল প্রকাশ হয়েছে ‘রেডিওলজি’ জার্নালে।
একই সঙ্গে গবেষণাটিতে মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু নিউরনকে শনাক্ত করা হয়, যা সক্রিয় হলে মানুষের মধ্যে অতিভোজনের প্রবণতা কমিয়ে আনে।
ডা. ইলোনা এ ডেক্কার্স বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, সারা দেহে চর্বির মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রে ম্যাটারসহ মস্তিষ্কের গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর পরিমাণও কমে যায়। তবে নারী ও পুরুষের মধ্যে এ সংশ্লিষ্টতার মাত্রার দিক থেকে ভিন্নতা দেখা গেছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, দেহে চর্বির মাত্রা ও মস্তিষ্কের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে লিঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।