দেশে পৌনে দুই কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে

আজ ২৫ এপ্রিল বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। ম্যালেরিয়া বিষয়ে সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দেশে পৌনে দুই কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। মশাবাহিত সংক্রামক রোগ ম্যালেরিয়া। সংক্রমিত স্ত্রীজাতীয় অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়; যা জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, সারা পৃথিবীতে ১০৬টি দেশের ৩.২ বিলিয়ন মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১৫ সালে সারাবিশ্বে ২১৪ মিলিয়ন নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ২০১৫ সালেই এই রোগে মারা গেছে ৪ লাখ ৩৮ হাজার জন। যদিও এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি আফ্রিকা মহাদেশে, তবু এশিয়া ও আমেরিকার অনেক অংশ রয়েছে ঝুঁকির মুখে। এই ভয়াবহ রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল পালন করে থাকে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ম্যালেরিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় থাকছে- ‘আমিই করব ম্যালেরিয়া নির্মূল’। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতে, দেশের ১৩ জেলার ৭১টি উপজেলার প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়া রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

এমনকি দেশের প্রায় ৯১ শতাংশ ম্যালেরিয়া রোগী এসব এলাকা থেকেই আক্রান্ত হন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকাগুলোর মধ্যে আবার রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান- পার্বত্য তিন জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার সর্বাধিক। এরপর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাতেও যথেষ্ট প্রকোপ রয়েছে। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কুড়িগ্রাম জেলাতে তুলনামূলক কম হলেও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গত দুই দশকে ম্যালেরিয়ায় সংক্রমণের হার কমে গেলেও, এখন আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে। এর পেছনে কি কারণ থাকতে পারে- তা ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের ম্যালেরিয়া বিভাগের পরিচালক ড. আকরামুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু ও পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে ম্যালেরিয়া জীবাণুবাহী মশার সংখ্যাবৃদ্ধি এর একটা বড় কারণ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এমএ ফয়েজ বলেন, আমরাই পারব ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে।

এ জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে সচেতন করতে হবে। আমাদের দেশে ম্যালেরিয়ার বিভিন্ন প্রকারভেদের মধ্যে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার সংখ্যাই বেশি। ভারত-মিয়ানমারে বেশি ভাইভেক্স ম্যালেরিয়া। তবে দেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়াও অন্যান্য জায়গা, বিশেষ করে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মেঘালয় এলাকা থেকে এই ভাইভেক্স বা মারাত্মক ম্যালেরিয়া বাংলাদেশে ছড়াচ্ছে। তাই আমরা শিগগিরই ভারতের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসবো, যাতে এই এলাকাগুলোতে ম্যালেরিয়া নির্মূল কার্যক্রম ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়। তা না হলে আমাদের লক্ষ্য অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব হবে না।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *