হৃদ্রোগীদের কোনো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। হার্টের সমস্যা যাঁর আছে, তিনি কি অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতে পারবেন? ধকল সইতে পারবেন? অচেতন করার ওষুধ তাঁকে দেওয়া কি ঠিক হবে? কিন্তু একজন হৃদ্রোগীর হঠাৎ অ্যাপেনডিকস, গল ব্লাডারে পাথর বা কোথাও কোনো টিউমারের অস্ত্রোপচার লাগতেই পারে।
হার্ট ফেইলিউর, হার্টে বাইপাস বা স্টেন্টিং করা, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, ত্রুটিপূর্ণ ভালভের রোগীদের অস্ত্রোপচারে অন্যদের তুলনায় ঝুঁকি একটু বেশিই থাকে। মধ্যম ঝুঁকি রয়েছে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, মৃদু বা মধ্যম ভালভের ত্রুটি ইত্যাদিতে। ছোটখাটো অস্ত্রোপচার যেমন: ফোঁড়া কাটা, চোখের ছানি কাটা, দাঁতের অস্ত্রোপচার ইত্যাদিতে এবং যেখানে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার করা হয়, তা মোটামুটি ঝুঁকিমুক্ত। আবার বড় অস্ত্রোপচার যদি জরুরি ও প্রাণ রক্ষাকারী হয়, তবে সব ঝুঁকি নিয়ে হলেও তা করতে হবে। অর্থোপেডিক, মস্তিষ্ক বা রক্তনালির কিংবা পেটের বড় ও দীর্ঘমেয়াদি অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি বেশি।
হৃদ্রোগীদের অস্ত্রোপচারে সতর্কতা
■ অস্ত্রোপচারের আগে সার্জন, অবেদনবিদ, হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ, প্রয়োজনে ডায়াবেটিস ও কিডনি বিশেষজ্ঞ সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া ও সমন্বিত চিকিৎসা দরকার।
■ আগে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা থাকলেও অস্ত্রোপচারের আগে আবার হার্টের অবস্থা, ইনজেকশন ফ্র্যাকশন, ভালভের অবস্থা, রোগীর চাপ নেওয়ার মাত্রা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা দরকার।
■ রক্ত পাতলা করার ওষুধ কত দিন আগে থেকে বন্ধ থাকবে ইত্যাদি বিষয় পরিষ্কার জেনে নেওয়া উচিত। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় কোনো পরিবর্তন (যেমন ওষুধের বদলে ইনসুলিন শুরু করা) আনার জন্য আগে থেকেই আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে নিন।
■ ভালো কার্ডিয়াক সাপোর্ট ও সিসিইউর সুব্যবস্থা আছে, এমন হাসপাতালে রোগীদের অস্ত্রোপচার করা ভালো।
■ এ ধরনের রোগীরা আগে থেকেই নাজুক অবস্থায় থাকেন, তাই পোস্ট অপারেটিভ কেয়ার খুব নিখুঁত হওয়া চাই। সংক্রমণ ঠেকাতে দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণসহ সেবাদানকারীর পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত।
ইদানীং অবেদনবিদ্যার প্রভূত উন্নতি ও ইনটেনসিভ কেয়ার সাপোর্টের কারণে হৃদ্রোগীদের যেকোনো বড় অস্ত্রোপচারও সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। তারপরও মনে রাখতে হবে যে এ ধরনের রোগীদের যেকোনো অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি।