নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মস্তিষ্কে প্রায় সারাজীবনই নতুন কোষ তৈরি হয়। কমপক্ষে ৯৭ বছর পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এতদিন মনে করা হতো যে, জন্মের সময় মস্তিষ্কে যে পরিমাণ কোষ থাকবে জীবনভর সে সংখ্যাটিই রয়ে যাবে, তাই নতুন ধারণাটি ব্যাপকভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করবে।ইউনিভার্সিটি মাদ্রিদের একদল গবেষক এমনও দেখিয়েছেন যে, বয়সের সাথে সাথে নতুন কোষ তৈরির সংখ্যাও বন্ধ হয়ে গেছে।
এবং আলঝেইমার রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোষের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমতে থাকে-তাই ডিমনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগের জন্যে এমন গবেষণা নতুন ধারণার সৃষ্টি করে।
আমাদের মস্তিষ্কের বেশিরভাগ কোষ যা নিউরন নামে পরিচিত নিজেদের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠায়- আর এই প্রক্রিয়া আমাদের জন্মের সময় থেকেই শুরু হয়।
অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনের পরবর্তী সময়েও তাদের মস্তিষ্কে নতুন কোষের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে নতুন নিউরনের উদ্ভব বা যে প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘নিউরোজেনেসিস’- অব্যাহত থাকে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক থেকে গেছে।
‘নেচার মেডিসিন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণাটি করা হয় ৫৮ জন মৃত মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে। যাদের বয়স সীমা ছিল ৪৩ থেকে ৯৭।
মূল মনোযোগ দেয়া হয় ব্রেন বা মস্তিষ্কের ‘হিপ্পোক্যাম্পাস’ নামক অংশ- যেটি স্মৃতি এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। যেমন আপনি আপনার গাড়িটি কোথায় পার্ক করে এসেছেন সেটি মনে করতে মস্তিষ্কের এই অংশটি ব্যবহৃত হয়।
নতুন নিউরন
জন্মের পর থেকে নিউরন মস্তিষ্কে পরিপূর্ণ রূপে থাকে না, বৃদ্ধি এবং পরিপক্ব হবার প্রক্রিয়ার সাথে সাথে তা পূর্ণতা পায়।
গবেষকরা মস্তিষ্কে এই অপরিণত বা ‘নতুন’ নিউরনকে নির্দিষ্ট করতে পেরেছেন। একটি সুস্থ মস্তিষ্কে বয়সের সাথে সাথে নিউরোজেনেসিস বা নিউরনের বৃদ্ধির পরিমাণ ‘সামান্য কম’ দেখতে পাওয়া যায়।
গবেষক ড. মারিয়া লরেন্স-মার্টিন বিবিসিকে বলেন, “আমার বিশ্বাস, মানুষ যতক্ষণ নতুন কিছু শিখছে ততক্ষণ নতুনভাবে নিউরনের বৃদ্ধি ঘটছে। এবং এটি আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তেই ঘটে চলেছে।”
কিন্তু আলঝেইমার রোগীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। আলঝেইমারের প্রাথমিক পর্যায়ে নতুন নিউরন বৃদ্ধির সংখ্যা প্রতি মিলিমিটারে ৩০,০০০ থেকে কমে দাড়ায় ২০,০০০ এ।
ড. লরেন্স-মার্টিন এর মতে, “রোগটির একদম শুরুতে এই হ্রাসের পরিমাণ থাকে ৩০%।” আলঝেইমার রোগটি এখনো নিরাময়যোগ্য নয়।
যদিও গত সপ্তাহেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করে এমন অনেক গবেষণা ব্যর্থ হয়েছে এবং সর্বশেষ গবেষণায় দেখা গেছে যে রোগটির শুরুর দিকে আরো বিশেষ কিছু ঘটছে।
ড. লরেন্স-মার্টিন বলছেন যে কেন নিউরোজেনেসিস প্রক্রিয়া হ্রাস পায় সেটি বুঝতে পারলে তার জ্ঞান কাজে লাগানো যাবে আলঝেইমার এবং স্বাভাবিক বয়স জনিত রোগের ক্ষেত্রে।
কিন্তু তিনি মনে করেন যে, এই গবেষণার পরবর্তী ধাপে গিয়ে হয়তো জীবিত মানুষের মস্তিষ্ক পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পরবে। সময়ের সাথে সাথে সেখানে কি ঘটে তা দেখার জন্যে।
আলঝেইমার রিসার্চ ইউকে গবেষণার প্রধান ড. রোসা সানচো বলেন, “যদি কখনো আমরা জীবনের শুরুর দিকে স্নায়ু কোষ হারাতে শুরু করি, সেক্ষেত্রে এই গবেষণা দেখাচ্ছে যে, পরবর্তীতে নতুন কোষের সৃষ্টি হতে থাকবে, এমনকি ৯০ বছর পর্যন্ত।” তবে এই নিয়ে আরো বড় পরিসরে গবেষণার তাগিদ দেন তিনি।