অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বে যে পরিমাণ গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন হয় তার এক চতুর্থাংশের জন্য দায়ী আমাদের খাদ্য। অর্থাত্ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পেছনে এই খাদ্য উত্পাদন অন্যতম প্রধান কারণ। তবে গবেষকরা দেখেছেন যে, একেক ধরনের খাবারের পরিবেশগত প্রভাব একেক রকম। তাই আপনার সাপ্তাহিক বাজার এই বিশ্বের পরিবর্তনে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। যেসব খাদ্যের উত্পাদন বা পরিবহন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে সেগুলো পরিত্যাগ করলে ধরণীর উপকারই করা হবে।
বিবিসি রেডিও ফাইভ তাদের কুল প্ল্যানেট সিজনে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত তথ্যচিত্র প্রচার করেছে। সেখানে তারা এটা খোঁজার চেষ্টা করেছে যে আমাদের প্রাত্যহিক বাজারে ছোটখাটো কোনো পরিবর্তনগুলো কীভাবে আমাদের গ্রহের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
ল্যানক্যাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বার্নার্স লি একাধারে একজন জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেছেন, বেশিরভাগ মানুষই বাড়িতে মাছ-মাংস খেয়ে থাকেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোয়। তাই ভেবে দেখুন সপ্তাহের ওই বিশেষ দিনগুলোর ডিনারে গড়ে কি পরিমাণ গ্রিল মুরগি, সসেজ, নুডুলস ইত্যাদি খাওয়া হয়? তিনি বলেন, গরু-ছাগল ইত্যাদির চেয়ে মুরগি পরিবেশের জন্য অপেক্ষাকৃত ভালো। তাই বেশি করে মুরগি খাওয়া যেতে পারে। মুরগি পালনও অপেক্ষাকৃত সহজ।
মাছ সম্পর্কে অধ্যাপক বার্নার্স-লি পরামর্শ দিয়েছেন এগুলো খাওয়া কমিয়ে আনতে। যেমন প্রতিদিনের পরিবর্তে প্রতি সপ্তাহে এক অথবা দুই বেলায় মাছ খাওয়া সীমিত রাখা যেতে পারে। প্রতিবারই আলাদা ধরনের মাছ খেলে পরিবেশের উপকার করা হবে। এতে শরীরে পুষ্টির বৈচিত্র্য যেমন আসবে তেমনি মাছের এক প্রজাতির উপর চাপও কমবে।
তিনি বলেন, যদি আপনার প্রতিদিন মাংস খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে সপ্তাহে মাত্র একটি দিন বেছে নিন যেদিন আপনি কোনো মাংস খাবেন না। এই ছোট পরিবর্তন পরিবেশে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায় যে, গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ অর্ধেকেরও বেশি হ্রাস করা সম্ভব হবে যদি আমরা সবাই সপ্তাহে রেড মিট খাওয়ার পরিমাণ এক বেলায় নামিয়ে আনতে পারি। আর সব সময় টাটকা খাবারের পিছে না দৌড়ে একবার উত্পাদিত খাবার হিমায়িত করে খেলে একদিকে সেটি টাটকা ও পুষ্টিযুক্ত থাকে অন্যদিকে পরিবেশের উপকার করা হবে। আবার বারো মাস ফলন হয় এমন অনেক সবজি রয়েছে যেগুলো উচ্চমাত্রার কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। যেমন কচি ব্রোকলি।