সাম্প্রতিক গবেষণা, সপ্তাহে তিনটির বেশি ডিম খেলে বাড়তে পারে হৃদরোগের ঝুঁকি

ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে আমরা জানি। তবে এই ডিম খাওয়া নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে অনেক দিন ধরেই। তবে সপ্তাহে কতটা ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক চলছিল।

এবার সব বিতর্কের অবসান ঘটাল নতুন একটি গবেষণা। আমেরিকান মেডিকেল জার্নাল জেএএমএর প্রকাশিত এক জরিপ রিপোর্টে বলা হচ্ছে সপ্তাহে তিনটির বেশি ডিম খেলেই বাড়বে হৃদরোগের ঝুঁকি।

নতুন প্রকাশিত এই জরিপ রিপোর্টে বলা হচ্ছে, প্রতিদিন দুটি ডিম খেলেই হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হওয়া ও অকালমৃত্যু হতে পারে। ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না-খারাপ তার নির্ভর করে আপনি সপ্তাহে বা দিনে কয়েকটি ডিম খাচ্ছেন।

তবে কথা হচ্ছে ডিম নিয়ে এত উদ্বেগের কারণ কী? কারণ ডিমের কুসুমে রয়েছে বিপুল পরিমাণ কোলেস্টেরল। এছাড়া আপনি যদি একটি বড় আকারের ডিমের কথা বলি তবে এতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১৮৫ মিলিগ্রাম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানুষের খাদ্যে দিনে সর্বোচ্চ ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি কোলেস্টেরল থাকা উচিত নয়। কিন্তু অর্ধেকেরও বেশি কোলেস্টেরল একটি ডিমেই রয়েছে।

আসুন জেনে নেই কী পরিমাণ ঝুঁকি-

এ জরিপে মোট ৬টি পরীক্ষার জানা গেছে, ১৭ বছর ধরে ৩০ হাজার অংশগ্রহণকারীর ওপরে ওই জরিপ চালানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে এতজন মানুষের প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে ৩০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল গ্রহণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে ১৭ শতাংশ। আর অকালমৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ে ১৮ শতাংশ।

তাই প্রতিদিন তিন থেকে চারটি ডিম খেলে হৃদরোগের ৬ শতাংশ বাড়তি ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া ৮ শতাংশ বাড়তি অকালমৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। আর দিনে দুটো করে ডিম খেলে এ ঝুঁকি বাড়ে যথাক্রমে ২৭ শতাংশ এবং ৩৪ শতাংশ।

তবে ডিম খাওয়ার ফলে হৃদরোগের এই অকালমৃত্যুর ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বয়স, ফিটনেসের স্তর, তামাক ব্যবহার, বা উচ্চ রক্তচাপের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর।

এ বিষয়ে জরিপ রিপোর্টটির অন্যতম প্রণেতা, এবং নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক নোরিনা এ্যালেন বলছেন, জরিপে দেখা গেছে, যে দুজন লোক যদি একই ধরনের খাবার খায় ও একজনের ক্ষেত্রে শুধু ডিমের পরিমাণটিই আলাদা হয় তাহলে এ লোকটির হৃদযন্ত্রের সমস্যার ঝুঁকি বেশি হবে।

তবে আগের জরিপের সঙ্গে এখনকার জরিপের রিপোর্ট মিলছে না। এর আগের গবেষণায় বলা হয়েছিল, ডিম খাওয়া এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।

ড. নোরিনা এ্যালেন বলছে, আগে যেসব জরিপ করা হয়েছিল তাতে নমুনার বৈচিত্র্য কম ছিল। নজর রাখা হয়েছিল এবং জরিপ পদ্ধতি বা বিশ্লেষণেও ভুল থাকতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞ বলেছেন, নতুন করা এই গবেষণা ফল পর্যবেক্ষণমূলক। তারা বলছেন, ডিম খাওয়ার সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধির সম্পর্ক থাকতে পারে তবে একটার জন্য অন্যটা হচ্ছে তা প্রমাণিত নয়।সপ্তাহে কতগুলো ডিম খাওয়া নিরাপদ এ প্রশ্নের জবাবে নোরিনা এ্যালেন বলেন, সপ্তাহে তিনটির বেশি নয়।

তিনি বলেন, আমি ডিম খাওয়া বাদ দিতে বলিনি শুধু কমাতে বলছি। এছাড়া কুসুম বাদ দিয়ে ডিমের সাদা অংশটা খেতে বলছি।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *