দুই বছর বা এর অধিক সময় কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে তাকে ডাক্তারি ভাষায় বন্ধ্যাত্ব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সাধারণত প্রতি ১০০ জন দম্পতির মধ্যে ৮৪ জন প্রথম বছরে এবং ৯২ জন দ্বিতীয় বছরের মধ্যে গর্ভধারণ করতে সমর্থ হন। তাই বলা যায়, প্রতি ১০০ জন দম্পতির মধ্যে ৮ জন বন্ধ্যাত্বের শিকার হন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
এক বছর বা এর অধিক সময় কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে বয়স ৩০-এর বেশি থাকলে ছয় মাস চেষ্টার পরই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
বন্ধ্যাত্বের কারণ
বন্ধ্যাত্বের বহুবিধ কারণ থাকে। স্বামী বা স্ত্রীর কোন একজন বা উভয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকতে পারে। তাছাড়া গর্ভধারনের জন্য দরকার একটি সুস্থ্ ওভাম (ডিম), সবল বীর্য ও নরমাল ইউটেরাস বা জরায়ু। এর যেকোনো জায়গায় সমস্যা হলে গর্ভধারণে ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে।
প্রাথমিকভাবে বন্ধাত্ব্যের কারণগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে : এনুভলেশন (ডিম্বাশয় থেকে ওভাম বা ডিম নিঃসরণ না হওয়া ), জরায়ু বা ডিম্বনালীর সমস্যা এবং পুরুষ সঙ্গীর সমস্যা।
ওভুলেসন বা ডিম্বস্ফুটন না হওয়ার কিছু কারণগুলো
• পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম
• হরমনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ : কিছু কিছু হরমোন যেমন প্রলেক্টিন, থাইরয়েড হরমোন অথবা পিটুইটারি FSH, LH হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ ও অভুলেশন ব্যাহত করে।
• ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বা কম থাকা।
• প্রিমেচিউর ওভারিয়ান ফেইলিউর
• অতিরিক্ত মানসিক চাপ।
• অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যান্সার কিংবা কিডনি রোগেও অভুলেশন ব্যাহত হতে পারে।
• কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি সাময়িক বা পরোপুরিভাবে ওভারিকে অকার্যকর করে দিতে পারে।
জরায়ু বা ডিম্বনালীর সমস্যা
• জারায়ুর টিউমার যেমন এডিনোমায়োসিস, ফাইব্রয়েড বা পলিপ।
• পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (পিআইডি) অথবা যেকোনো ইনফেকশনের কারণে ডিম্বনালী বন্ধ হয়ে ওভাম এবং শুক্রাণু নিষিক্তকরণের পথ বন্ধ করে দিতে পারে।
• এন্ডোমেত্রিওসিস বন্ধ্যাত্বের একটি পরিচিত কারণ। এ রোগের লক্ষণ মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পেটে ব্যথা ইত্যাদি।
• ইনফেকশন বা এন্ডোমেত্রিওসিস জরায়ু এবং এর আশপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক এনাটমি নষ্ট করে বন্ধাত্ব্যের কারন ঘটায়।
মেইল (পুরুষ) ফ্যাক্টর : ৩০-৫০ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
• শুক্রাণু বা বীর্য যথেষ্ট গতিশীল না হলে বা অস্বাভাবিক গঠনগত কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
• কোনো কারণে শুক্রাণু তৈরী ব্যাহত হলে, যেমন জিনগত ত্রুটি, ভেরিকোসেলি, টেস্টিসের টিউমার বা ইনফেকশন অথবা কোনো ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জনিত কারণে নরমাল শুক্রাণু তৈরী বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।
পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের হার বয়স বাড়ার সাথে কমে যায়। ৩৫ বছরের পর থেকে মেয়েদের ওভুলেশনের হার কমতে থাকে, একইসাথে শুক্রাণুর কার্যকারিতাও বয়সের সাথে সাথে কমে। তাই এই চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সাফল্যের হারও কমে যায়।