ক্যান্সার রোগীর সঠিক ওজন এবং পুষ্টিগত অবস্থা বজায় রাখার জন্য যথাযথ খাদ্য পরিকল্পনা করা তার
সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিছু সুনির্দিষ্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন খাদ্য সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। লিখেছেন চৌধুরী তাসনীম হাসিন
রেডিও থেরাপি বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ক্যান্সার রোগীরা খাদ্য গ্রহণে কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হন, যার মধ্যে সাধারণ সমস্যাগুলো হচ্ছে- ক্ষুধামন্দা, খাদ্যের স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, গ্যাস জমে পেট ফুলে থাকা, পেটে ব্যথা, শুষ্ক মুখ, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, বমি বমি ভাব, মুখে ঘা হওয়া, গলা ব্যথা ও ফুলে যাওয়া, বমি, ওজন হ্রাস প্রভৃতি।
এই বিরূপ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে রোগীদের চরম খাদ্য বিতৃষ্ণার কারণে, যা মূলত কেমোথেরাপির ফল। এ জন্য খাদ্য গ্রহণের দুই-তিন ঘণ্টা আগে ও পরে কেমোথেরাপি বন্ধ রাখা বাঞ্ছনীয়। শর্করা এবং চর্বি থেকে ক্যান্সার রোগীরা অনেক শক্তি পাবে। অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা রোগীর জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত কিছু আমিষ।
জরায়ুর ক্যান্সার, ব্রেস্ট, প্রোস্টেট এবং কোলন ক্যান্সার রোগীদের অতিরিক্ত চর্বিবহুল খাদ্য পরিহার করা দরকার। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ক্যালরিবহুল খাদ্য গ্রহণ গলব্লাডার ও এন্ড্রমেট্রিয়াম ক্যান্সারের জন্য ক্ষতিকর।
বেশ কিছু খাদ্য আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধী যেমন- আঁশযুক্ত খাবার কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিহত করে।
পাকস্থলী ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার। ভিটামিন-এ ও ক্যারোটিন যুক্ত খাদ্য ফুসফুস, ব্লাডার ও গলনালী (খধৎুহী) ক্যান্সার প্রতিরোধী। ফল ও সবজিতে ক্যান্সার প্রতিরোধী অনেক উপাদান আছে। ডালজাতীয় খাদ্যের মধ্যে সয়াবিন, মসুর, শুকনো সীমের বীচিতে ক্যান্সার বিরোধী উপাদান রয়েছে। সয়া খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ বাড়ালে তা ব্রেস্ট এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। লাইকোপেন ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- গাজর, টমাটো, প্রভৃতি ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
এ ছাড়াও ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই এর সম্পূরক ফর্ম -এর খাদ্যগুলোকে খাদ্য তালিকা হতে বাদ রাখার সুপারিশ করা হয়ে থাকে। কারণ এটি ক্যান্সার কোষের ধ্বংসে এবং ক্যান্সার চিকিৎসায় বাধা দেয়।
ক্যান্সার রোগীর জন্য সাধারণ কিছু পরামর্শ হলো-
যতটুকু সম্ভব খাদ্য গ্রহণের চেষ্টা করা।
প্রচুর তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা।
খাদ্য গ্রহণের মাঝে তরল পানীয় কম গ্রহণ করা।
খাদ্য গ্রহণের ৩০ মিনিট আগে বা পরে বেশি করে পানি পান করে নেয়া।
খাদ্য বা পানীয়ের গন্ধ পছন্দ না হলে সেটি গ্রহণ না করা।
মুখ সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখা।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে উষ্ণ তরল গ্রহণ করা।
উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা যেমন- শুকনো ফল, মটরশুঁটি, সীমের বীচি, শস্যজাতীয় খাদ্য।
ডায়রিয়া হলে সোডিয়াম ও পটাসিয়ামযুক্ত তরল খাদ্য গ্রহণ করা।
মুখ শুকিয়ে গেলে বরফের টুকরো বা চুয়িংগাম মুখে রাখা
বমি বমি ভাব থাকলে খুব গরম বা খুব ঠাণ্ডা খাদ্য ও তরল গ্রহণ না করা।
মুখে ঘা থাকলে তরল পান করার জন্য স্ট্র ব্যবহার করা।
এ ছাড়াও মুখে ঘা থাকলে টকজাতীয় ফল, মশলাযুক্ত খাবার, লবণাক্ত খাবার, শক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
দিনে তিন-চারবার কুলি করলে মুখের ঘা উপশম হবে।
ক্ষুধা লাগা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সময় অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা।