মৌসুমী ফল আনারস একটি সুস্বাদু ফল। এই সময়টাতে সাধারণত বেশি পাওয়া যায় ফলটি। বর্মে ঢাকা এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, পটাশিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, মেঙ্গানিজ, ভিটামিন সি এবং বিটা-ক্যারোটিন। আর এ উপদানগুলো শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
তবে প্রশ্ন হলো আনারস শরীরের জন্য আদৌ উপকারী ফল কি না। এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের গবেষণায় দেখা গেছে, ফলটি খেতে যতটা সুস্বাদু ততটাই পুষ্টিগুণে ভরপুর। শুধু তাই নয়, তাদের মতে সপ্তাহে ২-৩ দিন যদি নিয়ম করে আনারস খাওয়া যায়, তাহলে শরীরের দারুণ উপকার হয়।
১. আর্থ্রাইটিস প্রকোপ কমায়
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আনারসে ব্রমেলিন নামে এক ধরনের এনজাইম রয়েছে।এটি শরীরে প্রবেশ করার পর কমপ্লেক্স প্রোটিনকে ভেঙে দেয়। ফলে জয়েন্টের প্রদাহ কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের প্রকোপও হ্রাস পায়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়
ফলটিতে একদিকে যেমন রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, তেমনি রয়েছে অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড নামে একটি উপাদান, যা ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. তাড়াতাড়ি ক্ষত সারায়
খেলতে গিয়ে হাত পা কেটে গেছে? চিন্তা না করে ক্ষত সারাতে আনারস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ এই ফলে থাকা প্রচুর মাত্রায় কোলাজেন দ্রুত ক্ষত সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৪. ক্যান্সার প্রতিরোধক
গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ যে হারে বেড়েছে, তাতে আনারস খাওয়ার প্রয়োজন বিশেষভাবে বৃদ্ধি পয়েছে। কারণ এই ফলে রয়েছে বিপুল পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ। সেই সঙ্গে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, ব্রোমেলিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো উপাদানগুলো। এগুলো শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। সেই সঙ্গে দেহের ভেতরে যাতে কোনোভাবেই ক্যান্সার সেল জন্ম নিতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
৫. হজম ক্ষমতার উন্নতিতে কাজ করে
টক অল্প খেলেই ঢেকুর ওঠে। সেই সঙ্গে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বল যেন রোজের সঙ্গী? তাহলে আনারস খাওয়া ছাড়া আপনার কোনো উপায় নেই। কারণ একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, নিয়মিত এই ফলটি খেলে শরীরে ফাইবারের ঘাটতি দূর হয়। একই সঙ্গে ডায়রিয়া, কনস্টিপেশন এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রমের মতো পেটের রোগও সেরে যায়।
৬. হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
আনারসে ক্যালসিয়াম নেই ঠিকই, কিন্তু রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। এটি ক্যালসিয়ামের মতো হাড়কে শক্তপোক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই বুড়ো বয়সে নানাবিধ জটিল হাড়ের রোগে আক্রান্ত হতে না চাইলে এখন থেকেই নিয়মিত আনারস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন।
৭. দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
আনারসে উপস্থিত অ্যাস্ট্রিজেন্ট নামক একটি উপাদান ক্যাভিটির হাত থেকে দাঁতকে রক্ষা করে। সেই সঙ্গে দাঁতের একেবারে বাইরের আবরণকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে দাঁতের ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। এই সঙ্গে অ্যাস্ট্রিজেন্ট ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৮. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের যেমন বয়স বাড়তে থাকে, তেমনি দৃষ্টিশক্তির ওপরও প্রভাব পরে। তাই প্রতিদিন আনারস খেয়ে এটি আটকাতে পারেন। দেখবেন চোখের ক্ষমতা কমার নামই নেবে না। কারণ আনারসে রয়েছে বিটা-ক্য়ারোটিন নামক একটি উপাদান, যা রেটিনার ক্ষমতা বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে সার্বিকভাবে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৯. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে
আনারসে নানাবিধ ভিটামিনের পাশাপাশি রয়েছে বেশ কিছু খনিজও, যার মধ্যে অন্যতম হলো পটাশিয়াম। শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তাই যারা রক্তচাপের সমস্যায় দীর্ঘকাল ভুগছেন, তারা ইচ্ছা হলে এই ফলটির সাহায্য নিতেই পারেন। দেখবেন দারুণ উপকার মিলবে।