আমাদের সমাজে এখনো অটিজম, সেরিব্রাল পলসি মেন্টাল রিটার্ডেশন ইত্যাদি ব্রেইনের বিকাশ ব্যাহতজনিত জন্মগত রোগ নিয়ে সন্তান ভুমিষ্ট হলে মন খারাপ করে ফেলি। এমনকি প্রচণ্ড কুসংস্কারাচ্ছন্ন বলে এই রকম শিশু ব্রেইন বিকাশ ব্যাহত নিয়ে জন্ম নেওয়া রোগের জন্যে মা-বাবা কিংবা পরিবার কে দায়ী করি। বাঁকা দৃষ্টিতে তাকাই।
শিক্ষিত পরিবারের অনেকেই আছেন যারা অটিস্টিক বেবী বা সিপি বেবী নিয়ে কিছুটা হীনমন্যতায় ভোগেন। কোন আচার অনুষ্ঠানে বাচ্চাদের নিয়ে আসেন না। কিন্তু সেটা কি ঠিক? মোটেই না। পাকস্থলী, কিডনি, লিভার কিংবা রক্তের বিভিন্ন রোগের মতো এটাও এক ধরনের রোগ। এটা এসব অঙ্গের মতো ব্রেইনেরও বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হবার জন্যে তৈরি এক ধরনের রোগ।
যেহেতু ব্রেইনের বিকাশ ব্যাহতজনিত রোগ তাই এ রোগে র লক্ষণ প্রকাশ পায় চলাফেরা কথাবার্তা ও শিশুর আচার আচরনে। এ সকল কাজের মূল নিয়ন্ত্রক হলো আমাদের দেড় কেজি ওজনের ব্রেইন।
অটিজম ও সেরিব্রাল পালসি কী?
এ দুটোই গর্ভাবস্থায়, জন্মের সময় কিংবা জন্ম পরবর্তী সময়ে ব্রেইনের সঠিক বিকাশ ব্যাহত হবার জন্যেই হয়। বিকাশ ব্যাহত হবার অনেক কারণ রয়েছে, এর মধ্যে জেনেটিক্স, গর্ভাবস্থায় মায়ের রোগ, অপুষ্টি, আঘাত, ড্রাগ টক্সিসিটি, মায়ের জণ্ডিস, নবজাতকের জণ্ডিস ইত্যাদি প্রধান।
এই দুটো রোগ এক নয়। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। অটিজম বা অটিস্টিক বেবির চলাফেরা সাধারণত থাকে স্বাভাবিক কিন্তু আচার আচরণ ও কথাবার্তায় থাকে অসঙ্গতি আরসিপি (সেরিব্রাল পলসি) বেবীর সমস্যা হয় চলাফেরায়। তবে তার কথাবার্তা, আচার-আচরণে সমস্যা থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে।
অটিজমের যেমন অনেক প্রকারভেদ আছে তেমনি সিপির ও অনেক প্রকারভেদ আছে। অটিজম পাঁচ রকমের- ১) ক্লাসিক্যাল অটিজম ২) এসপারজারস সিনড্রোম ৩) পারভেসিভ ডেভেলপমেন্টাল ডিসওর্ডার ৪) রেট সিনড্রোম ৫) সিডিডি বা চাইল্ডহুড ডিসইন্টারোগেটিভ ডিসওর্ডার। অটিজম ছেলেদের বেশি দেখা যায়।
সেরেব্রাল পালসি চার রকমের যেমন-
১. স্পাসটিক ২. অ্যথেটয়েড ৩. অ্যাটাক্সিক ৪. মিক্সড্
স্পাসটিক সেরেব্রাল পালসি:
স্পাস্টিক সেরেব্রাল পালসিতে মাংসপেশীতে টানটান ভাব অনেক বেশি থাকে। জয়েন্টের নড়াচড়া অনেক শক্ত হয়ে যায়। এটা বেশ কমন।
অ্যথেটয়েড সেরেব্রাল পালসি:
এতে বাচ্চাদের হাত-পায়ের নাড়াচাড়া ধীর থাকে এবং কিছুটা মোচড়ানো হয়ে থাকে। মাংসপেশীর টানটান ভাব কম এবং বেশি থাকায় বাচ্চা সোজা হয়ে বসতে বা দাড়াতে পারেনা। তবে ঘুমের সময় এথেটয়েড মুভমেন্ট সাধারণত থাকেনা।
অ্যটাক্সিক সেরেব্রাল পালসি:
এ ধরনের বাচ্চারা নিজে থেকে কিছু করতে গেলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভেতর সমন্বয় করতে পারে না এবং ভারসাম্যেও সমস্যা থাকে। মাথা, ঘাড় ও কেমড় স্থির রাখতে পারে না। সাধারণত ব্রেইনের সেরিবেলাম অংশে দুর্বিলতা থাকে।
মিক্সড্ সেরিব্রাল পালসি:
এ ধরনের বাচ্চাদের লক্ষণসমূহ বিভিন্ন প্রকার সেরিব্রাল পালসি’র সমন্বয়ে হয়ে থাকে।
অটিস্টিক বা সেরিব্রাল পালসি রোগীর ভবিষ্যৎ:
অটিজম বা সি পি রগ মানেই ভবিষ্যৎ কষ্টের, অন্ধকার তা কিন্তু নয়। এই রোগ গুলো নিয়ন্ত্রণে রেখে জীবন সুন্দরভাবে চালিয়ে নেয়া যেমন ডায়াবেটিস, প্রেশার, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রেখে লাইফ দৈনন্দিন কাজ কর্ম চালিয়ে নেওয়া যায়।
অবাক করার বিষয় জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃথিবী পাল্টে দেয়া সেরা ব্যক্তিরা যেমন স্যার নিউটন, আইনস্টাইন, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, আর্কিমিডিস, ভন গেগ, জুলিয়াস সিজার, স্টিফেন্স হকিন্স এরা অনেকেই অটিস্টিক, সি পি সহ নানা প্রকার নিউরো ডিভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার এর রোগী ছিলেন। তারা এসব জয় করেই পৃথিবী কে পালটে দিয়েছেন।
তাই এসব শিশুদের হেলা করবেন না। এ রোগে মন খারাপও করবেন না। সাইকিয়াট্রিস্ট, নিউররোলজিস্ট ও ফিজিওথেরাপিস্টের সমন্বিত চিকিৎসায় তাদের জীবনকে বিকশিত করি। কী জানি হয়তো আপনার এই শিশুটিই হতে পারে পৃথিবীকে এগিয়ে নেয়া নিউটন, আইনস্টাইনের মতো সেরাদের একজন।
উন্নত বিশ্বে, ইউরোপ আমেরিকায় এ রকম শিশুদের ব্যাপারে অত্যন্ত যত্ন নেওয়া হয়, তাই তারা আজো জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত।