পৃথিবীর গঠনের মতোই আমাদের দেহের শারীরিক গঠন। আমাদের দেহের শতকরা ৬০ ভাগ পানি দ্বারা গঠিত। দেহের সব জৈবিক ক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পানিপান অপরিহার্য, এবং তা অবশ্যই জীবাণুমুক্ত।
জীবাণুমুক্ত পানি মানেই ফুটানো পানি, এবং আমরা সবাই সেই ফুটানো পানি পান করে থাকি। তবে কারো কারো ধারণা, বোতলজাত মিনারেল ওয়াটার জীবাণুমুক্ত, সেটা মোটেই ঠিক নয়। কারণ কোম্পানি কি পদ্ধতিতে বোতলজাত করে সেটা আমাদের পক্ষেই যাচাই করা সম্ভব না। আর যাচাই না করে জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করা বুদ্ধিমানের কাজ না। তাই ফোটানো পানির বিকল্প নেই।
অনেকেই প্রশ্ন করেন, পানিপান করি তবে পানিপান করার উপযুক্ত সময় কোনটি? আসলে পানি পানের উপযুক্ত সময় বলে কথা নেই, সুযোগ থাকলে সব সময়ই পান করা উচিত। অনেকে আবার এও বলেন, আমি সকালে উঠেই খালি পেটে এক কাপ চা বা কফি খাই। আবার অনেকে আছেন সকালে উঠে মুখ ধুয়ে আগে দুই গ্লাস পানিপান করেন। সকালে এই চা বা কফি পান ভালো, নাকি পানিপান ভালো? এ নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মুখ না ধুয়ে, কুলি না করে চা পান কে বলে বেড টি। এই বেড টি ভালো অভ্যাস নয়। এটি পরিহার করা উচিত। সকালে মুখ না ধুয়ে বা কুলি না করে খালি পেটে বেড টি খাওয়া মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। প্রথম কথা হলো সকালে যাই খেতে হয়, আগে কুলি করে নিতে হয়, হাত মুখ ধুতে হয়। কারণ সারা রাত মুখে ভেতর লালাতে প্রচুর জীবাণু জমতে থাকে।
তাছাড়া দীর্ঘ ঘুমের মধ্যে অজান্তে হাত, আঙ্গুল পরিষ্কার থাকাটাও অস্বাভাবিক। তাই সকালে উঠেই প্রথম কাজ হাত মুখ ধোয়া নেয়া। তারপর প্রধান কাজ এক গ্লাস বা দুই পানিপান করা। এতে শরীরের ভেতর ঠাণ্ডা হয়, আর্দ্রতা পায়।
তাছাড়া ঘুমের মধ্যে সারা রাত পাকস্থলীতে অ্যাসিড জমতে থাকে এবং তা ধীরে ধীরে খুবই ঘন হয়। এই ঘন অ্যাসিডে অনেক সময় অ্যাসিডিটি হয়, হার্ট বার্ন হয়। পানিপানে সেই অ্যাসিডিটি কিছুটা ঘনত্ব হারায়। ফলে তাতে পাকস্থলীর জন্য একটা উপকারী পরিবেশ তৈরি হয়। হার্ট বার্ন, অ্যাসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়। কিন্তু এই পানির পরিবর্তে কফি, চা বা জুস পান উল্টোটাই করে। তাই সুস্থ থাকতে হলে খালি পেটে বাসি মুখে চা বা কফি খাওয়ার অভ্যাস অবশ্যই পরিত্যাগ করা উচিত।
আর কোষ্ঠকাঠিন্য রোগটি মূলত হয় পানি কম খাওয়ার কারণে। শরীরে জল থাকে কম, ফলে মল হয় শক্ত। এটাই বেসিক কথা। সুতরাং সকালে খালি পেটে দুই গ্লাস পানি পান, শরীরে আর্দ্রতা ফিরিয়ে দিবে সেই সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করবে।
অনেকে আবার প্রশ্ন করেন, খাবার সময় পানি খাওয়া উচিত কিনা? অবশ্যই খাবার সময় পর্যাপ্ত পান করা হজমের জন্য সহায়ক। তাছাড়া গলায় খাবার আটকে যাওয়া, বমির ভাব হওয়া, ঢেকুর ওঠা, এসব জটিলতা এড়াতে খাবার টেবিলে প্রথমেই পানি দেওয়া উচিত। খাবারের মাঝখানে ও খাবার শেষে পানিপান একটা তৃপ্ততা এনে দেয়। খাবার গ্রহণের সময় তিনবার পানি পান রাসূল (সা.) সুন্নত।
পেটভর্তি খাবার খাওয়া বদ হজমের প্রধান কারণ। তাছাড়া এ থেকে কালক্রমে হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল, অ্যাসিডিটি হওয়া মামুলি বিষয়।
অনেকে অসময়ে প্রস্রাব এড়াতে খুব কম পানিপান বা মোটেই পানিপান করেন না। সেটাও ঠিক না, এতে কালক্রমে নানান কিডনি রোগের জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পানিপানের পর সেই পানি শরীরকে পরিশোধন করে, রক্তের সব বর্জ্যকে সঙ্গে নিয়ে দুই থেকে চার ঘণ্টা পর শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। সেই সময়টি হিসাব রেখেই প্রয়োজনে পানি করা যেতে পারে।
শরীরকে সুস্থ রাখতে, আর্দ্র রাখতে, দেহের অন্তঃপরিবেশের জৈবিক ক্রিয়া কলাপের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, নিজ অফিস আদালত বা কর্মস্থলে সব সময় দুই লিটার সুপেয় খাবার পানি সঙ্গে রেখে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।