মানসিক রোগীদের প্রতি বন্ধুর মত আচরণ করুন

মানসিক রোগীরা হয়তো বা রোগের কারণেই ব্যাপারটি সে রকম বুঝে উঠতে পারেন না। কিন্তু তাদের স্বজনরা আর তর সইতে পারেন না। তারা প্রায়ই প্রশ্ন করে থাকেন, ‘ডাক্তার সাহেব রোগীর তো উন্নতি নেই, ওষুধ আর কতদিন চলবে?’ সত্যি কথা বলতে কি সঠিক দিনক্ষণ হিসাব করে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। মানসিক রোগের চিকিৎসা আসলে দীর্ঘমেয়াদি। আর এই ‘দীর্ঘ সময়’ ৫-৭ বছর বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে। কিছু কিছু অসুখ যেমন বিষণ্ণতা, অ্যাংজাইটি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ৬-৯ মাসের চিকিৎসা যথেষ্ট। তবে এসব ক্ষেত্রেও কখনও কখনও আরও বেশি সময় লাগতে পারে। যে কোনো মানসিক রোগের চিকিৎসায় প্রথমে খুব অল্পসংখ্যক ওষুধ সর্বনিম্ন কার্যকর মাত্রায় শুরু করা হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময়ান্তে রোগীর উন্নতি বা অবনতির মাত্রা বিচার করে ওষুধের মাত্রা বাড়াতে বা কমাতে হয় অথবা ওষুধ পরিবর্তন বা যোগ করতে হয়। যতদিন মানসিক রোগের লক্ষণ মুক্ত না হয়, ততদিন রোগীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে ওষুধের মাত্রা ঠিক করতে হয়। বিষয়টা অনেকটা একটি রেডিও টিউন করার মতো, তবে এই টিউনিং করতে অনেক সময় প্রয়োজন। যে মাত্রার ওষুধে রোগের লক্ষণগুলো বিলুপ্ত হয়ে রোগী স্থিতিশীল পর্যায়ে আসে, ওই মাত্রার ওষুধ ছয় মাস থেকে এক বছর চালিয়ে যেতে হয়। আর বিপত্তি দেখা দেয় এই সময়েই। অধিকাংশ রোগী এবং তার স্বজনরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন, ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। অনেকেই বলেন, ‘নিয়মিত ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে দেখা করি অথচ তিনি নতুন কোনো ওষুধ লেখেনও না, মাত্রাও পরিবর্তন করেন না, শুধু কথা বলেই ছেড়ে দেন।’ 

আসলে এই সময়ে ডাক্তার শুধু দেখেন যে, রোগী স্থিতিশীল অবস্থায় আছে কি-না, নতুন কোনো লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কি-না এবং ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি-না। সুতরাং এই নিয়মিত ফলোআপ রোগীর চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার অসুখের লক্ষণ কমে যাওয়ায় অনেকে মনে করেন, রোগী সুস্থ হয়ে গেছে তাই আর ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু চিকিৎসার মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করলে রোগের লক্ষণ আবার ফিরে আসবে এবং তার তীব্রতাও আগের চেয়ে বেশি হবে। সাধারণত ৬ মাস থেকে এক বছর রোগী যদি লক্ষণমুক্ত থাকেন তখন তার ওষুধের মাত্রা সামান্য কমিয়ে আবারও তিন থেকে ছয় মাস পর্যবেক্ষণ করতে হয়। যদি এই সময়ের মধ্যে রোগের লক্ষণ বৃদ্ধি না পায় তাহলে ওষুধের মাত্রা আরও কমিয়ে আবারও পর্যবেক্ষণ করতে হয়। আর ওষুধের মাত্রা কমালে রোগের লক্ষণ যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে আবারও আগের বেশি মাত্রায় ওষুধ দিয়ে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যবেক্ষণ করতে হয়। অর্থাৎ একটি কথা খুবই স্পষ্ট- মানসিক রোগের চিকিৎসায় আপনাকে দিতে হবে সময় আর রাখতে হবে ধৈর্য। এর কোনো বিকল্প নেই। মানসিক রোগ কখনও ভালো হয় না এই ধারণা ঠিক নয়। তবে রোগের পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য খুব অল্প পরিমাণ কিছু ওষুধ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীকে সারাজীবন ওষুধ খেতে হতে পারে। আর অল্পকিছু ওষুধের বিনিময়ে যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন লাভ করা যায় তবে মন্দ কি? 

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *