ডায়াবেটিস থেকে চর্মরোগ

গত ১৪ নভেম্বর ছিল বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। প্রতিবারের মতো সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়েছে। ডায়াবেটিস সম্পর্কে রোগীদের সচেতন করাই ছিল এবারের লক্ষ্য। একজন চর্মরোগ চিকিৎসক হিসেবে ডায়াবেটিস থেকে চর্মরোগের নানা সমস্যা নিয়ে কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করছি-

সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং যারা এই রোগের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছেন তাদের মধ্যে ত্বকের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। প্রায় ৮০ ভাগ ডায়াবেটিক রোগীর নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়।

ডায়াবেটিস এবং ত্বকের ওপর এর প্রভাব নিয়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ হলো ত্বক, যা সমগ্র দেহকে আবরণ দিয়ে ঢেকে রেখেছে। বিশাল এই অঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন রূপে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। এগুলো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়াজনিত, ভাইরাল বা ফাংগাল ইনফেকশন। ডায়াবেটিক রোগীদের চামড়া শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণেও বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দেওয়ার পাশাপাশি প্রচ- চুলকানিও হতে পারে।

একানথোসিস নিগ্রিকানস

এ ধরনের একটি উপসর্গ হলো একানথোসিস নিগ্রিকানস। এর প্রভাবে ঘাড়ে, গলায় এবং শরীরের ভাঁজে চামড়া পুরো এবং কালো হয়ে যায় এবং এই রোগটি ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া ডায়াবেটিক রোগীদের ত্বকে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক রোগীদের সাধারণত শরীরের নিম্নাংশে বা পায়ে বড় বড় ফোসকা পড়ে।

ডায়বেটিক ডার্মাপ্যাথি

এতে রোগীদের পায়ে কালো বা বাদামি বর্ণের দাগ দেখা দেয়। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে চর্বি ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে শরীরে এক ধরনের হলদে দানাদার রোগ দেখা দিতে পারে।

কেন এই ত্বকের সমস্যা

সাধারণত গরমকালে ডায়াবেটিসজনিত চর্মরোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। গরম এবং আর্দ্রতার কারণে সবারই কমবেশি চর্মরোগ হতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে ক্ষত সহজে শুকায় না। তাই এক্ষেত্রে চর্মরোগের সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। এছাড়াও যাদের দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস আছে তাদের ত্বক অন্যদের থেকে শুষ্ক হয়ে যায় এবং বছরের যে কোনো সময় তাদের চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত ত্বক পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বিশেষ করে, ত্বকের যেসব জায়গায় ইনসুলিন দেওয়া হয় সে সব জায়গায় কোনো ঘামাচি, ফোড়া, ফুসকুড়ি ধরনের কিছু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তা গুরুত্বের সঙ্গে নির্মূল করা উচিত।

চর্মরোগ থেকে বাঁচতে হলে রক্তের শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ত্বককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তাছাড়া ডায়াবেটিক রোগীদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করার মতো সাধারণ নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। ত্বকের শুষ্কতা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ভালো ও উন্নত মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। কোথাও কেটে গেলে বা ছিলে গেলে শুরুতেই চিকিৎসা নিতে হবে। ডায়াবেটিক রোগীদের পায়ের ও নখের যতœ নেওয়া খুবই জরুরি। সর্বোপরি এতেও যদি কাজ না হয় তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।

ডা. জেসমিন আক্তার লীনা

লেখক, কনসালট্যান্ট ডার্মাটোলজিস্ট

সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়া, ঢাকা

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *